আশিস কুমার ঘোষ, তারকেশ্বর: হুগলি জেলার তারকেশ্বর ব্লকের অন্তর্গত বিনোগ্রাম উত্তর পাড়ার দুর্গাপুজো (Binogram Durga Puja) এবছর পা দিল গৌরবময় ৭৯ তম বর্ষে। ঐতিহ্য ও সমাজচেতনার এক অনন্য মেলবন্ধনের সাক্ষী এই পূজো দীর্ঘদিন ধরেই শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, সমাজের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। প্রতি বছরই সমাজের জ্বলন্ত সমস্যাগুলিকে তুলে ধরার মাধ্যমে মানুষের চিন্তাভাবনায় নতুন দিশা এনে দেয় এই পূজো কমিটি। এবারের থিম – “নিয়ম করে চেতনা গড়ো, নারীর নির্যাতন বন্ধ কর” – সেই ধারারই এক শক্তিশালী সামাজিক বার্তা।
কমিটির সদস্যদের মতে, প্রায় তিন থেকে চার মাস আগে থেকেই প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন কর্মী দিন-রাত এক করে অক্লান্ত পরিশ্রমে এই থিমের বাস্তব রূপ দিয়েছেন। এবারের থিমের মূল ভাবনায় রয়েছে একজন নারীর জীবনের সম্পূর্ণ যাত্রাপথ—জন্ম থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত। শৈশবের নিষ্পাপতা, কৈশোরের সংগ্রাম, যৌবনের স্বপ্ন ও বাধা, মাতৃত্বের ত্যাগ এবং বার্ধক্যের একাকিত্ব—সবটাই শিল্পকলার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে প্যান্ডেলের প্রতিটি কোণে।
Also Read | AI বদলে দিচ্ছে কলকাতার দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলের রূপ
এই থিমে তুলে ধরা হয়েছে নারীর জীবনের কূল-প্রতিকূল পরিস্থিতি, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, সমাজ ও পরিবারের প্রতি তাঁর অবদান এবং একই সঙ্গে তাঁর প্রতি সমাজের অবিচার ও বৈষম্যের চিত্র। নারী শুধুমাত্র এক পরিবারের অংশ নয়, তিনি সমাজ গঠনের এক অপরিহার্য শক্তি—এই বার্তাই দিতে চায় বিনোগ্রামের পূজো কমিটি।
কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “আমাদের উদ্দেশ্য শুধুই দেবী দুর্গার আরাধনা নয়, বরং সমাজকে মনে করিয়ে দেওয়া যে, নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নারীকে নির্যাতনের শিকার হতে দেখা আজও লজ্জার বিষয়, এবং এটি বন্ধ করার জন্য সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।”
প্যান্ডেল, থিম ও প্রতিমা – সব কিছুতেই প্রতিফলিত হয়েছে নারী শক্তির বার্তা। দর্শকরা এখানে দেখতে পাবেন নারীর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়কে এক এক করে ফুটিয়ে তোলা শিল্পসৃষ্টিকে। শুধুমাত্র পুজো নয়, এটি যেন এক জীবন্ত প্রদর্শনী, যা দর্শকদের চিন্তায় আলোড়ন তুলবে এবং সমাজকে ভাবাবে।
প্রতি বছরের মতো এবছরও বিনোগ্রামের এই পূজো দেখতে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত মানুষ আসবেন এই সামাজিক বার্তা ভরা পূজো দেখতে।
Also Read | এশিয়া কাপের আগে নকভির সঙ্গে করমর্দনের ভিডিও দিয়ে বিতর্ক উস্কাল শিবসেনা
কমিটির সভাপতি বলেন, “দেবী দুর্গা কেবল অসুর সংহারিনী নন, তিনি নারী শক্তির প্রতীক। আমরা চাই মানুষ বুঝুক – নারীকে সম্মান করা মানেই দেবীকে সম্মান করা। সমাজে নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা আমাদের সকলের কর্তব্য।”
বিনোগ্রামের দুর্গাপুজো আজ আর কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সমাজ পরিবর্তনের এক শক্তিশালী মঞ্চ। নারী শক্তির এই বার্তা আগামী প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে সহিংসতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং নারী-পুরুষ সমতার এক নতুন সমাজ গড়তে।