পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুরে (Bhagabanpur Horror) সোমবার সকালে ঘটে গেল এক শিহরণ জাগানো ঘটনা। সিনেমার গল্পকেও হার মানানো এই ঘটনায় প্রকাশ্য রাস্তায় স্কুল শিক্ষককে লক্ষ্য করে প্রাণঘাতী হামলার অভিযোগ উঠেছে। কাটারি দিয়ে আক্রমণ করে শিক্ষকের হাতের কবজি দ্বিখণ্ডিত করে দেয় এক যুবক। ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমগ্র এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। গুরুতর আহত শিক্ষককে প্রথমে ভগবানপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত শিক্ষকের নাম গোকুল চন্দ্র মুড়া। তিনি ভগবানপুর থানার শিমুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ কুলবেড়িয়া তালদা গ্রামের বাসিন্দা এবং তাহলদা আত্মিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত যুবক নন্দ বর্মনের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে পিচ রাস্তা থেকে ঢালাই রাস্তায় ঢোকার সময় আচমকা নন্দ বর্মন হাতে কাটারি নিয়ে গোকুলবাবুর উপর চড়াও হয়। মাথার দিকে কোপ মারতে গেলে হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেন শিক্ষক। সেই সময়ই তাঁর হাতের কবজি প্রায় দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
এই ঘটনায় দীর্ঘদিনের পারিবারিক দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে। জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকেই গোকুলবাবুর নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে নন্দ বর্মনের সম্পর্ক শুরু হয়। একাধিকবার মেয়েটি বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় এবং পুলিশ তদন্তে নেমে তাকে উদ্ধার করে। নন্দ বর্মনের বিরুদ্ধে পক্সো আইনে মামলা রুজু হয় এবং আদালতের নির্দেশে তাঁকে দীর্ঘদিন জেল হেফাজতে থাকতে হয়। সেই সময় তাদের এক মাসের কন্যা সন্তানকেও হোমে পাঠানো হয়। জামিনে মুক্তি পেলেও সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকে।
২০২৪ সালে ফের মেয়ে ও নাতনিকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে নতুন মামলা দায়ের করেন গোকুলবাবু। আদালতে নাবালিকা স্বীকার করে যে তাঁকে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হয়েছিল। দীর্ঘদিনের বিচারিক প্রক্রিয়ার পর সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট নন্দ বর্মনের জামিন খারিজ করে দেয়। ফলে তাঁকে আবারও জেলে যেতে হতো। পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে বারবার নিরাপত্তা চাওয়া হলেও সোমবার ঘটে যায় চরম বিপর্যয়।
প্রত্যক্ষদর্শী মাধব মাইতি জানান, “ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখি রাস্তায় পড়ে রয়েছে কাটা হাত। পাশেই রক্তমাখা একটি কাটারি।” এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ভগবানপুর থানার ওসি শাহেনশা হক বলেন, “এখনও পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ পেলে ঘটনার সবদিক খতিয়ে দেখা হবে।”
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, দীর্ঘদিন ধরে চলা পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এই নৃশংস আক্রমণ ঘটল। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত পলাতক। এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত গ্রেফতার করা হোক নন্দ বর্মনকে এবং আক্রান্ত শিক্ষকের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।
ভগবানপুরের এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে আলোড়ন তৈরি করেছে। দিনেদুপুরে প্রকাশ্য রাস্তায় শিক্ষকের উপর এই হামলা কেবল আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নই তুলছে না, বরং ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে কীভাবে নৃশংস অপরাধ ঘটতে পারে তার উদাহরণ হিসেবে সামনে এসেছে।