স্বাধীনতার আগে থেকেই বাঙালি বিরোধী কংগ্রেস: তৃণমূল বিধায়ক

রবিবার ফেসবুকে বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারি লিখেছেন, “ভারতবর্ষের কোনও প্রদেশের কোনও নেতা কোনও দল- সে কংগ্রেস বিজেপি সিপিএম যেই হোক, বাংলা তথা বাঙালীকে মোটেই…

Bengali Opposition Congress Since Before Independence: TMC MLA

short-samachar

রবিবার ফেসবুকে বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারি লিখেছেন, “ভারতবর্ষের কোনও প্রদেশের কোনও নেতা কোনও দল- সে কংগ্রেস বিজেপি সিপিএম যেই হোক, বাংলা তথা বাঙালীকে মোটেই পছন্দ করেনা,এ কথা রাজনীতির যে কোন ছাত্র মানতে বাধ্য।কংগ্রেস কতটা বাঙালি বিরোধী তার অতি ন্যাক্কারজনক প্রকাশ আমরা দেখে ছিলাম স্বাধীনতা পূর্ব ভারতে ওই দলের হরিপুরা কংগ্রেসের অধিবেশন কালে। মহাত্মা নামে বন্দিত মিঃ গান্ধী কী নগ্ন নির্লজ্জ্যতায় সেদিন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের বিরোধীতায় নেমে পড়েছিলেন ভাবলে অবাক হতে হয়!
যিনি অধিকাংশ সদস্যের ভোটে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন চাপ দিয়ে সেই সুভাষচন্দ্র বোসকে বাধ্য করেছিলেন পদত্যাগ করতে। এর কী কারন? কারন একটাই কোন বাঙালী যেন উচ্চ পদে পৌঁছে যেতে না পারে।

   

এমনটা আমরা বঙ্গের মাননীয়া মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গেও হতে দেখেছি কিছু বছর আগে। এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করেছিল কংগ্রেস যে ওনাকে সেই দল ছেড়ে এসে নতুন দল গড়তে হয়েছিল।

এমনটা হতে দেখেছি সিপিএম নেতা জ্যোতি বসুর সঙ্গেও। যখন এমন একটা সময় এসেছিল যাতে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যেতে পারতেন। অন্য অপর কেউ নয়, তাঁকে আটকাতে অবাঙালী সিপিএম নেতারা তীব্র বিরোধীতায় একযোগে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। পরবর্তীকালে মাননীয় জ্যোতি বসু যাকে বলেছিলেন হিমালয় তুল্য ভুল।এটা ভাববার বিষয়- যখন এতবড় একটা সুযোগ এসেছিল যেটা হলে সারা ভারতে সিপিএম পার্টি শাখা প্রশাখা বিস্তার করে বলশালী দল হয়ে উঠতে পারতো, সে সুযোগ কেন কাজে লাগালো না!

এই প্রসঙ্গে আমার একটি পৌরানিক কাহিনী মনে পড়ে যাচ্ছে। সেটা মহাভারতের যুদ্ধের কাল। পাণ্ডবপক্ষের হয়ে যুদ্ধ করার জন্য ভীমপুত্র অনার্য বীর ঘটোৎকচ কুরুক্ষেত্র রনাঙ্গনে এসে পৌঁছেছেন। তখন খুব ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। কৌরব সেনাপতি বীর কর্ন অর্জুনকে মারবার জন্য তাঁর সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ‘একাঘ্নীবান’ নিয়ে যুদ্ধে নামবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যে বান নিক্ষেপ করলে যার দিকে নিক্ষেপ করা হবে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত।
তখন ধুর্ত কৃষ্ণ সেদিনের যুদ্ধে অর্জুনকে যেতে নিষেধ করলেন আর সেনাপতি হিসাবে যুদ্ধে নামবার জন্য ঘটোৎকচকে নির্দেশ দিলেন।অদিবাসী সরল সোজা বীর ঘটোৎকচ সে তো এত চালাক চতুর নয়।জানেনা যুদ্ধে কী হতে যাচ্ছে। তাই সে নেমে পড়লো মহারণে।আর বানে বানে কর্নকে বিদ্ধস্ত করেদিল। পরাজয় অনিবার্য এটা বুঝতে পেরে যুদ্ধের মধ্যপর্বে নিরুপায় কর্ন প্রয়োগ করে বসল তাঁর সেই একমাত্র মহাবান- ‘একাঘ্নীবান’।যা সে অতিযত্নে অর্জুনের জন্য সংরক্ষিত রেখেছিল।সেই বান বুকে বিধে ঘটোৎকচ যখন মারা যাচ্ছে আনন্দে কৌরব পক্ষ নয়, উদ্বাহু নেচে উঠল পাণ্ডবপক্ষের বন্ধু ধুর্ত শ্রীকৃষ্ণ।

কৃষ্ণের এত উল্লাসের কারন কী? জানতে চাইলেন যুধিষ্ঠির। তখন হেসে হেসে বলেন শ্রীকৃষ্ণ– কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যে হারুক আর যে জিতুক জিতবে আর্যদের পক্ষ।কৌরব অথবা পাণ্ডব যেই জিতুক যুদ্ধের পরে থাকবে ক্ষয়িষ্ণু হীনবল এক শক্তি হয়ে। সেই সময় যদি ঘটোৎকচ মতো একজন অনার্য বীর বেঁচে থাকে- বলা যায়না কোন এক সময় আর্য সমাজ ওঁর দ্বারা বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে।আগামীর সেই বিপদ থেকে আজ আর্য জাতি রক্ষা পেয়ে গেল- তাই আমার এত উল্লাস।

এটাই হচ্ছে রাজনীতি।তাই জ্যোতিবাবু প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। হতে দেয়নি বাঙালী বিরোধী শক্তি। তারা অংক কষে এটা বুঝেছিল-আর যেই প্রধানমন্ত্রী হোক,যে দলের প্রধানমন্ত্রী হোক,তাতে বাঙালীর কোন লাভ আর যেমনঅবাঙালী- তথা গোবলয়ের কোন ক্ষতি হবে না।তাই নিজেদের নাক কেটে- মানে নিজের দলের ক্ষতি হবে জেনেও জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেয়নি অবাঙালী লবি।

যেমন কংগ্রেস দল পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে জেনেও মাননীয়া মমতা ব্যানার্জীকে যথাযোগ্য সম্মান দায়িত্ব দেয়নি। সেটা করলে আজ শুধু বাংলায় নয় সারা ভারতে কংগ্রেস আজ থাকতো সবার শীর্ষে।

আমরা কংগ্রেসকে দেখেছি সিপিএমকে দেখেছি এখন দেখছি বিজেপিকে। যে বীভৎসতায় তারা বাংলা ও বাঙালী জাতির ক্ষতিসাধনে তৎপর একমাত্র নির্বোধ আর স্বজাতিদ্রোহী না হলে চোখে না পড়ার আর কোন কারন নেই। আবাস যোজনার টাকা বন্ধ, একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ, পরিকল্পিত ভাবে ডিভিসির জল ছেড়ে বাংলার জেলার পর জেলাকে ডুবিয়ে দেওয়া, সে সব তো আছেই বাংলাকে বঞ্চনা করার সে ইতিহাস এত লম্বা যে বলতে গেলে লেখা এত বড় হয়ে যাবে যে কারো পড়বার ধৈর্য থাকবে না।

সব থেকে বলার ব্যাপার যেটা সেটা হলো এই বঙ্গ থেকে ওঁরা আঠারোটা সাংসদ পেয়েছিল, ২৪ সালে পেয়েছে বারোটা। তবু ওঁরা বাংলার কোন সাংসদকে পূর্নমন্ত্রীর দায়িত্বভার দেয়নি। সব সিকিমন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রী।কেন? আর কেন?? কারন তারা যেন বাংলার কোন উন্নয়ন করতে না পারে। উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের মন জিতে যেন বড় নেতা না হয়ে উঠতে পারে।সবাই যেন তাঁদের মুখাপেক্ষি- হুকুমবরদার হয়ে থাকে।

এই সব কথার চাইতেও যেটা বড় কথা সেটা হচ্ছে, ওঁরা আমাদের প্রতি কতটা জিঘাংসু, কতটা আক্রামক তার বড় প্রমান- ওঁরা আজ আমাদের খাদ্যাভ্যাসের উপরেও তীব্র আক্রমন হানতে আরম্ভ করে দিয়েছে। আমরা কী খাবো, কীভাবে খাবো, মাছ খাবো না মাংস,চিড়ে খাবো না পান্তাভা্‌ত, সে নিয়েও ওদের বাক্যবান নিন্দা সমালোচনা ধেয়ে আসছে। এই আক্রমনকে প্রতিহত না করা হলে আগামী দিনে বাঙালী জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে। আমাদের খাদ্য আমাদের পরিচ্ছদ আমাদের ভাষা আমাদের সাম্প্রদায়িক একতা সব কিছুকে ওঁরা চুরমার করে দিয়ে একটা নির্জীব মৃতপ্রায় জাতিতে পরিনত করে ফেলবে।

কথা হচ্ছে গোটা অবাঙালী দল, দলনেতা আমাদের উপর এত ক্ষুব্ধ ক্ষিপ্ত কেন? সেই যে কথায় আছে একটা উট নিজের উচ্চতা নিয়ে খুবই গর্বিত ছিল। সে ভাবতো তাঁর মত বড় জগতে আর কেউ নেই, কিছু নেই। সে একদিন হাটতে হাটতে চলে গেল এক পাহাড়ের কাছে । গিয়ে দেখে- বাপরে! কী বিশাল। কোটি জন্মেও আমি এত উঁচু হতে পারবো না। তখন সে রাগে দুঃখে পায়ের খুঁড় দিয়ে পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা ঘাস ফাস ছিড়ে মনের দাহ খানিকটা কমাতে চাইলো- এই আর কী ! ওঁরা এখন তাই করছে ! আমাদের ঘাস ফাস খানিক ছিড়ে মনের রাগ মেটাচ্ছে!

ওঁরা জানে হাজার জনম গেলেও বাঙালীর মতো হতে পারবে না।ওঁরা যখন ইংরেজের জুতোর শুকতলা চাটতো আমাদের বীর বাঙালীরা তখন গুলি করে ইংরজদের বুক ঝাঁঝরা করে দিতো।আন্দামান সেলুলার জেলে ৫৫৬ জন বাঙালী বিপ্লবী বন্দী ছিলেন।আর কোন জাতির এতজন বিপ্লবী ওখানে ছিল না।গুজরাতি তো একজনও নয়।

গুজরাতিদের কথা বললে মনে পড়ে যায় মেহুল চোসকি, নীরব মোদী, ললিত মোদীদের কথা। যে ৩৮ জন চিটিংবাজ দেশের ব্যাঙ্ক ফাঁকা করে বিদেশে পালিয়ে গেছে তাঁর ৩৭ জনই গুজরাতি।হ্যা, ইংরেজের পা চাটা সাভারকর- সেই পদার্থও গুজরাতের “পয়দাইশ” ।ওদের ঝুলিতে যেখানে এই সব মহামানব, আমাদের বাংলা জন্ম দিয়েছে ঋষী বঙ্কিমচন্দ্র, নেতাজি সুভাষচন্দ্র, রাজা রামমোহন, বিদ্যাসাগর, স্বামী বিবেকান্দ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। ক্ষুদীরাম বিনয় বাদল দীনেশ মাষ্টারদা সূর্য সেনকে।

ওঁরা বলে ওদের গান্ধীর জন্য নাকি দেশ স্বাধীন হয়েছে! কিন্ত বহু ইংরেজ ইতিহাসবিদ লিখে রেখে গেছেন যে গান্ধী নয়, ইংরেজ পালিয়েছে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ভয়ে।তখনও সুভাষ আত্মগোপন করে আছে। আবার কোনদিন কোনদিক থেকে ঝাঁপিয়ে পড়বে কেউ জানে না। সে আক্রমন হবে পূর্বের চাইতে হাজার গুন ব্যাপক। তাই তাঁদের পলায়ন।

আমাদের এই বঙ্গের তিন তিনজন সুযোগ্য সন্তান- বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। যা ভারতের আর কোনও জাতি পায়নি।আমাদের ঋষী বঙ্কিমচন্দ্র যে বন্দে মাতরম স্লোগান দিয়েছিলেন-শত শত যুবক সেই স্লোগান দিয়ে ফাঁসির দড়ি গলায় পড়ে নিয়েছে। আজও কোটি প্রান উদ্বেল হয়ে ওঠে সেই স্লোগানে।ওদের কারো ক্ষমতা হয়নি আজও সেই স্লোগানের বিপরীতে একটা নতুন স্লোগান তৈরী করার।

আমাদের বাংলার কবি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে সঙ্গীত লিখে গেছেন তাকে মর্যাদা দিতে হয়েছে জাতীয় সঙ্গীত রূপে । কোনও “ মাইকা লালের” দম হয়নি এমন আর একটি সঙ্গীত রচনা করার।ওঁরা এত নির্লজ্য বেহায়া যে- যে পাকিস্থানকে উঠতে বসতে গাল দেয় সেই পাকিস্থানের এক কবি ইকবালের একটা গান “সারে জাহাসে আচ্ছা” দিয়ে নিজেদের মুখ রক্ষার প্রয়াস করে!আমাদের এই সব গর্ব অহংকারের সামনে গোবলয়ের কেউ মাথা তুলে দাঁড়াতে পাছে না, পারবে না। তাই ওদের আমাদের প্রতি এত রাগ ঘৃনা ক্রোধ আক্রোশ।

তবে এটাও একদম ঠিক যে মীরজাফর রাজভল্লব রায়দুর্লভ এই সবও আমাদের বাঙলায় জন্মে ছিল। সেই সব বেইমান বিশ্বাসঘাতকদের বংশধররা আজও বঙ্গের অলিগলিতে ছড়িয়ে আছে। এদের সহযোগিতায় আজ বাংলার রাজধানী কোলকাতা মহানগর সহ বাংলার সমস্ত বড় বড় রেলষ্টেশন, শিল্পাঞ্চল, ব্যাবসা কেন্দ্র বহিরাগত গুঠকা বাহিনী দ্বারা দখল হয়ে গেছে।কোলকাতার একটা ফুটপাতও আজ আর মুক্ত নেই।

আশার কথা ঘন ঘোর দূর্যোগের কালো মেঘ সরে গিয়ে বঙ্গের ভাগ্যাকাশে আজ আবার নতুন সূর্যের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।একদল তরতাজা যুবক বিনয় বাদল দীনেশ ক্ষুদীরামের মতো আত্মত্যাগী বাসনায় নতুন এক বঙ্গ গড়তে জীবনবাজী রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।যারা বলছে বাংলার মাঠপাথার জলজমি,শহর বন্দর,ফুটপাত রাজপথ,চাকরি ব্যবসা, রাজনীতি খেলার অঙ্গন, সব –সব থাকবে বাঙালির অধিকারে। আজ যেন নতুন শপথে প্রদীপ্ত-দিকে দিকে আবার জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটতে দেখা যাচ্ছে। আকাশ বাতাস বিদীর্ন হচ্ছে জয় বাংলা স্লোগানে-। এত মানুষের এত জাগরন নতুন ভোর আনবেই।বঙ্গ বিজয় এখন শুধু মাত্র সময়ের অপেক্ষা।
জয় বাংলা, জয় বাঙালী।”