কলকাতা: বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যে বাঙালিদের উপর চলতে থাকা হেনস্তা, নিপীড়ন ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এবার সরাসরি পথে নামছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আগামী ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার), বেলা ১টা থেকে কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হবে প্রতিবাদ মিছিল, যার নেতৃত্বে থাকবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে হাঁটবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও হাজার হাজার তৃণমূল কর্মী-সমর্থক।
এই মিছিল শেষ হবে ডোরিনা ক্রসিং-এ। রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে এই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “বাংলা ভাষা বলার অপরাধে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাঙালিদের উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ ও জলের সংযোগ কেটে দেওয়া হচ্ছে। দিল্লির জয় হিন্দ কলোনি, ওড়িশার বিভিন্ন এলাকা, এমনকি গুজরাট, মধ্যপ্রদেশেও বাঙালিরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। মুখ্যমন্ত্রী বারবার এই বিষয়ে কেন্দ্রকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ হয়নি। তাই এবার আন্দোলনের পথেই প্রতিবাদ জানাবেন তিনি।”
উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে বলেছিলেন, “নয়াদিল্লির বসন্তকুঞ্জের জয় হিন্দ কলোনি থেকে উঠে আসা একের পর এক ভয়ঙ্কর হেনস্তার ঘটনার খবর শুনে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও বিচলিত। বাংলাভাষা বললেই যেন দোষ, অথচ ভারত বহু ভাষার মিলনক্ষেত্র।”
এই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী এদিন সরাসরি রাজপথে নেমে বার্তা দিতে চলেছেন— বাংলার মানুষ অন্য রাজ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো ব্যবহার সহ্য করবে না।
এদিনের মিছিলে হাওড়া, দমদম, ভাঙড়, সল্টলেক-সহ কলকাতার আশপাশের তৃণমূল নেতৃত্ব ও কর্মীরা অংশ নেবেন বলে জানা গিয়েছে। এছাড়াও, কলকাতার বাইরেও— রাজ্যের প্রতিটি জেলাতে দুপুর দুটো থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি একাধিক সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন খবর উঠে এসেছে যেখানে দেখা গিয়েছে, দিল্লির জয় হিন্দ কলোনিতে বাঙালি পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে, শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার কারণে তাঁদের সামাজিকভাবে বয়কট করা হচ্ছে। শিশুদের স্কুলে হেনস্তা করা হচ্ছে, এবং মহিলাদেরও অপমানের শিকার হতে হচ্ছে।
রাজ্য সরকার এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে, কিন্তু কেন্দ্র নীরব। তাই এবার তৃণমূল কংগ্রেস সরাসরি জনমত গঠনের দিকে এগোচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে জানা যাচ্ছে, একই দিনে দিল্লিতেও দলীয় নেতারা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। সেখানেও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বাঙালি বৈষম্যের প্রতিবাদ জানানো হবে।
সব মিলিয়ে ১৬ জুলাই রাজ্যে ও রাজ্যের বাইরে একযোগে “বাঙালি হেনস্তার বিরুদ্ধে তৃণমূল” কর্মসূচি এক নতুন রাজনৈতিক বার্তা দিতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই প্রতিবাদ মিছিল ঘিরে কলকাতা শহরে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।