মুর্শিদাবাদ হিংসার জেরে বাংলায় AFSPA দাবিতে শাহকে চিঠি সাংসদের

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট (AFSPA) জারির দাবি উঠেছে। বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত…

Bengal MP Jyotirmoy Singh Mahato Demands AFSPA in Murshidabad Amid Ongoing Violence

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট (AFSPA) জারির দাবি উঠেছে। বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে এই দাবি জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, মুর্শিদাবাদ, মালদা, নদিয়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হিন্দুদের উপর হামলা, লুণ্ঠন এবং হত্যার ঘটনা ঘটছে, যার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের তুষ্টিকরণ নীতি দায়ী। সাংসদের দাবি, রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে, এবং এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৯৫৮ সালের এএফএসপিএ আইনের ধারা ৩-এর অধীনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা জরুরি।

সাংসদের অভিযোগ: ‘বাংলা জ্বলছে, হিন্দুরা রক্তাক্ত’

জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর পরিকল্পিত হামলা চলছে। তিনি দাবি করেছেন, মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলের প্রতিবাদের নামে সংঘটিত সহিংসতায় হিন্দুদের বাড়িঘর লুণ্ঠিত হয়েছে, তাদের জীবনহানি ঘটেছে। তিনি এই পরিস্থিতির তুলনা করেছেন কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপর অতীতের অত্যাচারের সঙ্গে, এবং বলেছেন, “বাঙালি হিন্দুরা এখন শিকারের শিকার।” তাঁর মতে, তৃণমূল সরকারের তুষ্টিকরণ নীতি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। এই পরিস্থিতিতে এএফএসপিএ জারির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপই একমাত্র সমাধান বলে তিনি মনে করেন।

মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি

মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ও ধুলিয়ান এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে সহিংসতার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদের নামে পাথর ছোঁড়া, সম্পত্তি ভাঙচুর এবং পুলিশ ও বিএসএফের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাতে হিজলতলায় বিএসএফের গাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ ও বিএসএফ যৌথভাবে এলাকায় টহল দিলেও, উত্তেজনা এখনও কমেনি। রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই অশান্তির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এএফএসপিএ কী এবং কেন দাবি?

আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট (এএফএসপিএ) একটি বিশেষ আইন, যা কেন্দ্রীয় সরকারকে অশান্ত এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করার ক্ষমতা দেয়। এই আইনের অধীনে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় বাহিনীকে গ্রেফতার, তল্লাশি এবং প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়। জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর দাবি, মুর্শিদাবাদে চলমান সহিংসতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, রাজ্য পুলিশ এটি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এএফএসপিএ জারির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপ জরুরি। তিনি অমিত শাহকে এই বিষয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর এই দাবি রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিজেপির তরফে বলা হচ্ছে, তৃণমূল সরকারের ব্যর্থতার কারণেই রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালাও অভিযোগ করেছেন, মমতা সরকারের তুষ্টিকরণ নীতি হিন্দুদের উপর নির্বাচিত হামলার জন্য দায়ী। অন্যদিকে, তৃ практикеণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান এবং ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সহিংসতার পিছনে বহিরাগত দুষ্কৃতিরা জড়িত। তাঁরা পুলিশের কাছে এই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

Advertisements

প্রশাসনের পদক্ষেপ

মুর্শিদাবাদে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও বিএসএফ তৎপর রয়েছে। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল করণি সিং সেখাওয়াত সামশেরগঞ্জে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং জানিয়েছেন, পুলিশের প্রয়োজন অনুযায়ী বিএসএফ মোতায়েন থাকবে। তবে, এএফএসপিএ জারির বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

মুর্শিদাবাদে চলমান সহিংসতা এবং সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর এএফএসপিএ জারির দাবি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। এই ঘটনা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার উপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। পুলিশ ও বিএসএফের তৎপরতা সত্ত্বেও এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনা এখনও চ্যালেঞ্জিং। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই চিঠির জবাবে কী পদক্ষেপ নেন, তা ভবিষ্যতের পরিস্থিতি নির্ধারণ করবে। স্থানীয় বাসিন্দারা শান্তির প্রত্যাশায় রয়েছেন, এবং এই ঘটনার পিছনে থাকা মূল দোষীদের চিহ্নিত করার জন্য প্রশাসনের উপর নির্ভর করছেন।