উৎসবের পর, বীরভূমের রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে অনুব্রত (Anubrata) মণ্ডল ও কাজল (Kajal) শেখের দ্বন্দ্ব। শুক্রবার, কাজল শেখ কোর কমিটির (Core Committee) সদস্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন ছয়জনের একটি কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। কাজল বলেন, “দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোর কমিটি সম্পর্কে যা ঠিক করেছেন, তা সকলের মেনে চলা উচিত। এ নিয়ে কোনও বিতর্ক হওয়া উচিত নয়।”
অনুব্রত মণ্ডল, যিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, তিনি আবারও জানান যে কোর কমিটি বৃদ্ধি করা উচিত। তিনি বলেন, “সবাই একসঙ্গে চললে আমাদের জন্য ভালো হবে। কোর কমিটি নতুন কিছু নয়, এটি আগেও ছিল এবং আমি দিদিকে জানিয়েই এটি তৈরি করেছিলাম।” অনুব্রতের এই মন্তব্যের মাধ্যমে দলের অভ্যন্তরে একটি নতুন বিতর্কের সূচনা হয়েছে।
এদিকে, তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ এই পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই সবকিছু দেখছেন। বীরভূমে দলের ফল ভালো হয়েছে, তাই সেখানে সবাই তাদের কথা দলের কাছে বলবে।”
প্রসঙ্গত, জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের গত দুবছরের অনুপস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি আট সদস্যের কোর কমিটি গঠন করেন। প্রথম পর্যায়ে কোর কমিটিতে দুই সাংসদ—শতাব্দী রায় এবং অসিত মাল থাকলেও, লোকসভা নির্বাচনের আগেই তাঁদের বাদ দিয়ে ছয়জনের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কোর কমিটিতে রয়েছেন ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, সভাধিপতি কাজল শেখ, বিকাশ রায়চৌধুরি, অভিজিৎ সিংহ এবং সুদীপ্ত ঘোষ।
অনুব্রত মণ্ডল ফেরার পরেই কোর কমিটির সদস্য সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অনুব্রত হয়তো তার অনুগামীদের কোর কমিটিতে স্থান দেওয়ার জন্য এই পরিবর্তন চাইছেন। এর ফলে দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে।
বোলপুরের দলের কার্যালয়ে, তৃণমূল নেত্রীর তৈরি করা কোর কমিটির সদস্যদের ছবির হোর্ডিং সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপটি রাজনৈতিক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। অনুব্রতের কোর কমিটির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হলে, সেখানে তার ঘনিষ্ঠ বিধায়কগণ যেমন শিক্ষাসেলের গগন সরকার এবং জেলা পরিষদের সদস্য নারায়ণ হালদার অন্তর্ভুক্ত হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
বৈঠক সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরি জানান, “বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে বৈঠক ডাকা সম্ভব হয়নি। সদ্য ব্লকে ব্লকে বিজয়া সম্মিলনী সম্পন্ন হয়েছে। কালীপুজোর রেশ কাটলেই বৈঠক হবে।” তবে অনুব্রতের কোর কমিটির বৃদ্ধির পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এই ঘটনার পর, অনুব্রত ও কাজলের মধ্যে দ্বন্দ্ব যে কেবল রাজনৈতিক চাপের ফল নয়, বরং দলের সাংগঠনিক দিকগুলোকেও স্পর্শ করছে, তা স্পষ্ট। উৎসবের পরে, এখন দেখা যাবে এই দ্বন্দ্বের পরিণতি কি হতে চলেছে এবং দলের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের উপর এর কি প্রভাব পড়বে।
এখন সবার নজর কোর কমিটির বৈঠকে। সেখানে কিভাবে বিষয়গুলি মোকাবেলা করা হবে, তা দেখা জরুরি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কোর কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য বজায় রাখা সম্ভব হবে কিনা, সেটাই এখন মূল প্রশ্ন।