আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে গেরুয়া শিবিরে এখন জোর চলছে সাংগঠনিক সংস্কারে। একুশের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল জয়ের পর থেকে বিজেপি বারবার বুঝতে পেরেছে, সংগঠনের ভিত মজবুত না হলে ভোটের ময়দানে লড়াই সম্ভব নয়। এবার তাই মণ্ডল পর্যায়ের সীমারেখা পেরিয়ে আরো নিচুস্তরে, অর্থাৎ ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে গোটা রাজ্যজুড়ে বুথ সংগঠনকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিয়েছে বঙ্গ বিজেপি (Bengal BJP)।
Bengal BJP: বুথে এজেন্টের ঘাটতি, চিন্তায় নেতৃত্ব
দলের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৩০ শতাংশ বুথে বিজেপির পক্ষ থেকে কোনও স্থায়ী এজেন্ট নেই। কিছু ক্ষেত্রে ১৫–২০ জন কর্মীও জোগাড় করা যাচ্ছে না। ফলে নির্বাচনের দিন ভোটারদের সক্রিয় করার পাশাপাশি বুথ পাহারা দেওয়াও দুষ্কর হয়ে উঠছে। তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটিগুলোতে এর প্রভাব আরও বেশি। তাই এবার থেকেই বুথ ধরে ধরে সক্রিয় এজেন্ট গড়ে তোলার দিকে জোর দিচ্ছে বিজেপি (Bengal BJP) নেতৃত্ব।
মণ্ডল থেকে ওয়ার্ড কমিটি
এখন পর্যন্ত রাজ্য বিজেপির (Bengal BJP) সাংগঠনিক কাঠামো মণ্ডল কেন্দ্রিক ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় নির্দেশে এবার মণ্ডলের নিচে ওয়ার্ড স্তরেও কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। লক্ষ্য একটাই—যত ছোট ইউনিটে সংগঠন ভাগ হবে, ততই জনসংযোগ বাড়বে। এই ওয়ার্ড কমিটিগুলো বুথের কাজ সরাসরি পর্যবেক্ষণ করবে এবং প্রয়োজনীয় এজেন্ট ও কর্মী সরবরাহ করবে।
জেলা কমিটিতে বড় পরিবর্তন
ওয়ার্ড স্তরের পাশাপাশি জেলা স্তরেও ব্যাপক পুনর্গঠন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৯টি জেলায় নতুন সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী দিনে প্রতিটি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হবে, যেখানে মহিলা মোর্চা, যুব মোর্চা, এসসি–এসটি–ওবিসি মোর্চা সহ বিভিন্ন শাখা সংগঠনকে নতুন করে সাজানো হবে। তবে এই পরিবর্তন ঘিরে কিছু অসন্তোষও তৈরি হয়েছে। ব্যাংকুরা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং মুর্শিদাবাদের কিছু এলাকায় নতুন নেতৃত্ব নিয়োগকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নেতৃত্বে পরিবর্তন: নতুন মুখ শমীক ভট্টাচার্য

জুলাই মাসেই সাংগঠনিক রদবদলের অংশ হিসেবে প্রদেশ সভাপতির পদ থেকে সুকান্ত মজুমদারকে সরিয়ে বিজেপি নেতৃত্বে আনেন অভিজ্ঞ মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যকে। তাঁকে ঘিরে দলের অন্দরে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। দীর্ঘদিন রাজ্য রাজনীতিতে মুখপাত্র হিসেবে কাজ করায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগও যথেষ্ট দৃঢ়—এমনটাই মনে করছে গেরুয়া শিবির।
ডিজিটাল অডিটে ঘোস্ট কর্মী চিহ্নিতকরণ
সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মীবাহিনীর বাস্তব সংখ্যা জানতেও বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে বিজেপি। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে চলছে এক ধরনের ‘অডিট’। এর মাধ্যমে অকার্যকর বা কাগুজে কর্মীদের বাদ দিয়ে আসল ও সক্রিয় ক্যাডারদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। নেতৃত্বের দাবি, এতে নির্বাচনী প্রস্তুতি আরও বাস্তবসম্মত হবে এবং কার্যকরভাবে বুথে মোতায়েন করা যাবে।
📰 সাংগঠনিক সংস্কার: ২০২৬ ভোটে জনতার মন ফেরাতে নতুন কৌশল বঙ্গ বিজেপির
🔍 বিজেপি সূত্রের খবর, রাজ্যের প্রতিটি এলাকায় ‘বুথ শক্তি কেন্দ্র’ তৈরি করাই এখন অগ্রাধিকার।#BengalPolitics #BJP #WestBengalElections2026 #TMCvsBJP #PoliticalNewshttps://t.co/790EZ92foN pic.twitter.com/AKcSikCoyw— Kolkata24x7 (@ekolkata24x7) September 6, 2025
ভোটার তালিকা পরিস্কার
সাংগঠনিক পরিবর্তনের পাশাপাশি বিজেপির আরেকটি বড় প্রচেষ্টা হলো ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণ। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি তুলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের বহু জায়গায় ভুয়ো ভোটার রয়েছে। মৃত ব্যক্তির নামে ভোট, দ্বৈত নাম, এমনকি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের নামও ভোটার তালিকায় ঢুকে পড়েছে—এমন অভিযোগ দলের তরফে জোরদারভাবে তুলছে বিজেপি। এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
সামগ্রিক বিশ্লেষণ
- ভিত শক্ত করার প্রচেষ্টা: ওয়ার্ড কমিটি তৈরি করে প্রতিটি বুথে এজেন্ট নিশ্চিত করার উদ্যোগ কার্যত নিচুতলা থেকে সংগঠনকে শক্ত করার কৌশল।
- নেতৃত্বে নবজোয়ার: শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠছে, যা কর্মীদের উজ্জীবিত করছে।
- ডিজিটাল স্বচ্ছতা: কর্মী যাচাই ও অকার্যকর সদস্য বাদ দেওয়ার উদ্যোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংগঠনকে আরও কার্যকর করছে।
- ভোটার তালিকা সংস্কার: অবৈধ ভোটার সরানোর উদ্যোগে দলের রাজনৈতিক বার্তাও স্পষ্ট—স্বচ্ছ ভোট চাই।
বঙ্গ বিজেপির (Bengal BJP) সাংগঠনিক পরিবর্তন কেবল আসন্ন ২০২৬ নির্বাচনের প্রস্তুতি নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে রাজ্যে দলীয় ভিত্তি মজবুত করার কৌশল। ওয়ার্ড কমিটি থেকে শুরু করে জেলা স্তরের নতুন নেতৃত্ব, ডিজিটাল অডিট এবং ভোটার তালিকা পরিস্কার—সব মিলিয়ে জনতার মন বুঝে রাজনীতিতে নতুন জায়গা তৈরি করার চেষ্টায় ব্যস্ত গেরুয়া শিবির। এখন দেখার, এই পরিবর্তন কতটা কার্যকরভাবে ভোটের ময়দানে প্রতিফলিত হয়।