বঙ্গোপসাগরে টানা নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় (Bay of Bengal cyclone) সৃষ্টির প্রবণতা এ বছর শীতের আগমনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে একটি ঘূর্ণিঝড় কাটার আগেই আরেকটি নতুন ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ায় সমুদ্রের বায়ুচাপের তারতম্য বেড়েছে। যদিও আবহাওয়া দফতর নিশ্চিত করেছে যে এই নতুন ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি প্রভাব পশ্চিমবঙ্গে পড়বে না, কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং শীত ঢোকার পথে এর পরোক্ষ প্রভাব পরিষ্কারভাবে অনুভূত হচ্ছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে বঙ্গোপসাগর অস্বাভাবিকভাবে অস্থির হয়ে উঠেছে। ঘন ঘন নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হওয়ায় বাতাসের দিক এবং আর্দ্রতার মাত্রা বদলাচ্ছে, যার ফলে দক্ষিণবঙ্গের রাতের তাপমাত্রা এক লাফে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি বেড়ে গেছে। শীতের যে আমেজ সাধারণত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকেই টের পাওয়া যায়, তা এ বছর ম্লান।
দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আপাতত রাজ্যে বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। দক্ষিণবঙ্গজুড়ে শুষ্ক আবহাওয়াই বজায় থাকবে। সকাল এবং রাতের দিকে হালকা কুয়াশা দেখা দিতে পারে, তবে তা খুব ঘন হবে না। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় শীতের অনুভব আরও কমে যাচ্ছে।
উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি জেলা দার্জিলিংয়ে অবশ্য শীতের আমেজ তৈরি হয়েছে। সেখানে তাপমাত্রা নেমে এসেছে প্রায় ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যদিও স্বাভাবিকের তুলনায় এটি কিছুটা বেশি, কিন্তু পাহাড়ি অঞ্চলে শীতের উপস্থিতি এখনই স্পষ্ট। অন্যদিকে পশ্চিমের জেলা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং ঝাড়গ্রামে রাতের তাপমাত্রা ১৩–১৪ ডিগ্রির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
কলকাতার তাপমাত্রা শেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি থেকে বেড়ে আজ ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। আবহাওয়া দফতরের মতে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তাপমাত্রা এই বাড়তি স্তরেই থাকতে পারে। সমুদ্রের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রাতের পারদ দ্রুত নামবে।
রাজ্যে শীতপ্রেমী মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। প্রতি বছর ডিসেম্বরের শুরুতেই হালকা ঠান্ডা পড়তে দেখা গেলেও, এ বছর ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী আবহাওয়া এই চেনা ছন্দকে ব্যাহত করেছে। তবে দফতর জানিয়েছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শীত ধীরে ধীরে জাঁকিয়ে বসবে এবং রাতের তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির কাছাকাছি নেমে আসবে।
