ব্যারাকপুর সিপি অফিস অভিযানে রনক্ষত্রে চিড়িয়ামোড়

দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজে ঘটে যাওয়া গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) মঙ্গলবার ব্যারাকপুর (Barrackpore) পুলিশ কমিশনারেট (সিপি) অফিস ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল। এই…

Kolkata Gang Rape Protest

দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজে ঘটে যাওয়া গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) মঙ্গলবার ব্যারাকপুর (Barrackpore) পুলিশ কমিশনারেট (সিপি) অফিস ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল। এই অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং বিশিষ্ট আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী।

তবে, এই কর্মসূচি কেন্দ্র করে ব্যারাকপুরের চিড়িয়ামোড় (Barrackpore) এলাকার পরিস্থিতি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি, ধরপাকড় এবং লাঠিচার্জের ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে অভিযানকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।

   

কসবা কাণ্ডে একজন প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) একজন স্থানীয় নেতার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে, যা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

বিজেপি (Barrackpore) এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে রাজ্য সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে এবং অভিযোগ করেছে যে, তৃণমূল সরকার ধর্ষকদের আশ্রয় দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বিজেপি রাজ্যজুড়ে জেলাশাসক ও পুলিশ কমিশনারেট অফিস ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করে।মঙ্গলবার সকাল থেকে ব্যারাকপুরের চিড়িয়ামোড় এলাকায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা জমায়েত শুরু করেন।

কৌস্তভ বাগচী, বিজেপির জেলা সভাপতি সুজিত সাহা এবং অন্যান্য নেতারা এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন। মিছিলটি ব্যারাকপুর সিপি অফিসের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। বিজেপি কর্মীরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে (Barrackpore) পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করে। এই ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।কৌস্তভ বাগচী বলেন, “কসবা কাণ্ডে তৃণমূলের নেতা জড়িত থাকলেও রাজ্য সরকার তাঁকে রক্ষা করছে।

আমাদের শান্তিপূর্ণ অভিযানে পুলিশের লাঠিচার্জ ন্যায়বিচারের পথে বাধা।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, যে পুলিশ তার মা বৌ এর অপমানের জবাব দিতে পারেনা তারা আমাদের অভিযান আটকাতে এসেছে। আর.জি. কর থেকে কসবা, প্রতিদিন নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, আর তৃণমূল সরকার নীরব দর্শক।”

বিজেপির জেলা (Barrackpore) সভাপতি সুজিত সাহা জানান, “পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে হামলা করেছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি এবং কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছি।”পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিজেপি কর্মীরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করায় এবং আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের সম্ভাবনা দেখা দিলে পুলিশ বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ করে।

ব্যারাকপুর (Barrackpore) পুলিশ কমিশনারেটের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা এবং পুলিশের উপর হামলার কারণে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।” তিনি আরও জানান, আটক করা কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisements

তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বিজেপির উপর পাল্টা অভিযোগ তুলেছে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “কসবা কাণ্ডে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু বিজেপি নিজেদের মিত্র কার্তিক মহারাজের ধর্ষণ মামলায় নীরব। তারা রাজনৈতিক স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে।”

এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। কসবা কাণ্ডে তৃণমূল নেতা মনোজিৎ মিশ্রের জড়িত থাকার অভিযোগে বিজেপি তৃণমূল সরকারের উপর নারী নিরাপত্তার ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে। অন্যদিকে, তৃণমূল নবগ্রামে কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে বিজেপির নীরবতার সমালোচনা করেছে।

এই পাল্টাপাল্টি (Barrackpore) অভিযোগের মধ্যে ব্যারাকপুরের চিড়িয়ামোড়ে পুলিশ ও বিজেপি কর্মীদের সংঘর্ষ সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।চিড়িয়ামোড়ে লাঠিচার্জের ফলে এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়, এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভের কারণে ব্যবসায় ক্ষতির মুখে পড়েন। স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ মণ্ডল বলেন, “আমরা ন্যায়বিচার চাই, কিন্তু এভাবে রাস্তা অবরোধ আর সংঘর্ষ আমাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলছে।”

এই ঘটনায় জাতীয় মহিলা কমিশন (এনসিডব্লিউ) কসবা কাণ্ডের স্বতঃপ্রণোদিত সংজ্ঞান নিয়েছে এবং পুলিশকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচী জানিয়েছেন, তাঁরা এই ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলাম, কিন্তু পুলিশের বর্বরতা আমাদের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।”

তিনি কসবা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন, যাতে নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত হয়।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটক করা বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া এবং পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কার্তিক মহারাজের শাস্তির দাবিতে হাতে ঝাঁটা নিয়ে পথে নামল নবগ্রামের মহিলারা

তবে, বিজেপি দাবি করেছে, (Barrackpore) তাদের কর্মীদের উপর অযাচিতভাবে শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, এবং কসবা কাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি এবং ব্যারাকপুরের সংঘর্ষের ফলাফল ভবিষ্যতে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।