বারাসত: উত্তর ২৪ পরগনার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এবার বাস্তবে রূপ পেতে চলেছে। নোয়াপাড়া থেকে বারাসত (Barasat-Noapara Metro) পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণের কাজ নতুন করে গতি পেল। ইতিমধ্যেই মেট্রো কর্তৃপক্ষ মধ্যমগ্রামের ৪টি এবং বারাসত শহরের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সয়েল টেস্টের জন্য দুই পুরসভার কাছে আনুষ্ঠানিক অনুমতি চেয়েছে। এর ফলে নোয়াপাড়া থেকে মাইকেলনগর পর্যন্ত পাতাল মেট্রো চালুর পাশাপাশি বারাসত পর্যন্ত প্রকল্পের সম্ভাবনা আরও দৃঢ় হল।
২০১০-২০১১ সালে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারাসত-নোয়াপাড়া মেট্রো প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন। মূল উদ্দেশ্য ছিল উত্তর শহরতলির ব্যস্ততম শিয়ালদহ-বনগাঁ রেলশাখার ভিড় কমানো এবং বিমানবন্দর থেকে ১২নম্বর জাতীয় সড়কের যানজট হ্রাস করা। প্রতিদিন প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ কলকাতা-বারাসত রুটে যাতায়াত করেন, ফলে দ্রুত ও আরামদায়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার চাহিদা দীর্ঘদিন ধরেই তীব্র।
প্রকল্পটি মূলত দুই ধাপে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে নোয়াপাড়া, দমদম ক্যান্টনমেন্ট, যশোর রোড, বিরাটি ও মাইকেলনগর পর্যন্ত লাইন। নোয়াপাড়া ও দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন হবে উত্তোলিত পথে, বাকিটা পাতালপথে। দ্বিতীয় ধাপে মাইকেলনগর থেকে বারাসত পর্যন্ত সম্প্রসারণ। জমি অধিগ্রহণের জট এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তির কারণে এই অংশটি পুরোপুরি পাতালপথে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পুরো রুটের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১.৮৫ কিমি। মাইকেলনগর থেকে গঙ্গানগর কাটাখাল হয়ে মধ্যমগ্রাম স্কাউট গ্রাউন্ড, তারপর যশোর রোডের সমান্তরাল পথে বারাসতের পূর্বাচল, কেএনসি রোড, কাছারি মাঠ হয়ে বর্ণালী সংঘ, এবং শেষে সুরিপুকুর পর্যন্ত যাবে মেট্রো।
প্রস্তাবিত স্টেশনগুলি হল—
বিধানপল্লি
চৌমাথা সংলগ্ন মধ্যমগ্রাম
হৃদয়পুর
বারাসত বিদ্যাসাগর স্টেডিয়াম
কাছারি ময়দান
বারাসত ইএমইউ কারশেড
জয়পুর (যশোর রোডের কাছে)
সুরিপুকুর (১২নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন)
জানা গিয়েছে, জয়পুরে ভুপথে একটি ডিপো তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে মেট্রো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই রুট সার্ভে সম্পন্ন করে নকশা প্রস্তুত করেছে। এবার সয়েল টেস্টের অনুমতি মিললেই ধাপে ধাপে নির্মাণ কাজ শুরু হবে। বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “বারাসতের সাংসদের উদ্যোগে এই প্রকল্পে গতি এসেছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জেনেছি, ২০৩০ সালের মধ্যে এই লাইন চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা সয়েল টেস্টের জন্য অনুমতি দিয়েছি।”
মধ্যমগ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান নিমাই ঘোষ বলেন, “মেট্রো চালু হলে পরিবহণ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন হবে। ট্রেন, মেট্রো ও জাতীয় সড়ক—এই তিন ধরণের যোগাযোগ একসঙ্গে থাকায় মানুষের সময় ও পরিশ্রম বাঁচবে, যানজট কমবে।”
বারাসত-নোয়াপাড়া মেট্রো চালু হলে উত্তর শহরতলির মানুষ দ্রুত সময়ে কলকাতায় পৌঁছতে পারবেন। যাতায়াতের গতি বাড়বে, রেল ও সড়কের চাপ কমবে এবং বিমানবন্দরের সাথে সংযোগ আরও সহজ হবে। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর নতুন করে প্রকল্পের অগ্রগতি শহরবাসীর মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।