জলপাইগুড়িতে (Banglapokkho) বাংলার দ্বিতীয় অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)-এর দাবিতে আগামী ৬ জুলাই, ২০২৫, রবিবার এক বিশাল মিছিলের আয়োজন করেছে বাংলাপক্ষ। এই মিছিলের মাধ্যমে বাংলা পক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবার দাবি জানিয়েছে। প্রসঙ্গত কেন্দীয় সরকারের হস্তক্ষেপে এই ধরণের চিকিৎসা গবেষণা মূলক এবং উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী হাসপাতাল বাংলায় প্রয়োজন, যাতে বাংলার স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার উন্নতি হয়।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা গর্গ চট্টোপাধ্যায় (Banglapokkho) এক্স হ্যান্ডেলে বলেছেন , “বিহারে দুটো এইমস, উত্তরপ্রদেশে দুটো এইমস। কিন্তু বাংলায় একটা এইমস কেন? জলপাইগুড়িতে বাংলার দ্বিতীয় এইমস-এর দাবিতে আমাদের লড়াই দীর্ঘদিন ধরে চলছে।” এই মিছিলে সকলকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এই দাবি উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন এবং বাংলার স্বাস্থ্যসেবায় কেন্দ্রীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি জোরালো প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
CBSE-র মতো একই পথে হাঁটবে কি মধ্যশিক্ষা পর্ষদ?
দ্বিতীয় এইমস-এর দাবির পটভূমি
পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে কেবল একটি এইমস রয়েছে, যা কল্যাণী, নদীয়া জেলায় অবস্থিত। (Banglapokkho) এই এইমস ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্বোধনের পর থেকে কার্যকরী হয়েছে। তবে, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো, বিশেষ করে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কোচবিহার, এবং আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে, তাঁদের অঞ্চলে উন্নত স্বাস্থ্যসেবার অভাব রয়েছে।
জলপাইগুড়ি জেলা, যা উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র, তিস্তা ও কারলা নদীর তীরে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত। এই অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৩৮ লক্ষ (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী), এবং এখানকার মানুষকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রায়ই কলকাতা বা শিলিগুড়ির মতো শহরে যেতে হয়।
বাংলা পক্ষের (Banglapokkho) দাবি, বিহারে দুটি এইমস (পাটনা ও দারভাঙ্গা) এবং উত্তরপ্রদেশে দুটি এইমস (লখনউ ও গোরখপুর) থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে মাত্র একটি এইমস রয়েছে। এই বৈষম্য কেন্দ্রীয় সরকারের বাংলার প্রতি উদাসীনতার প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, জলপাইগুড়িতে একটি এইমস স্থাপন করা হলে উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলার মানুষ উপকৃত হবে, এবং ভুটান ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের রোগীরাও এর সুবিধা পাবে।
বাংলা পক্ষের উদ্যোগ (Banglapokkho)
বাংলা পক্ষ, (Banglapokkho) একটি বাঙালি সাংস্কৃতিক ও অধিকারভিত্তিক সংগঠন, দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিভিন্ন ইস্যুতে সোচ্চার। এই সংগঠন কেন্দ্রীয় সরকারের বাংলার প্রতি বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। জলপাইগুড়িতে দ্বিতীয় এইমস-এর দাবি তাদের একটি প্রধান এজেন্ডা।
স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর প্রেক্ষাপট
জলপাইগুড়ি শহরে বর্তমানে (Banglapokkho) একটি মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল রয়েছে, তবে এটি অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে অপর্যাপ্ত। শহরের জনসংখ্যা ১,০৭,৩৪১ (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী), এবং এখানে সাক্ষরতার হার ৮৬.৪৩%, যা জাতীয় গড়ের তুলনায় বেশি। তবে, উন্নত চিকিৎসা সুবিধার অভাবে রোগীদের প্রায়ই শিলিগুড়ি বা কলকাতায় যেতে হয়। জলপাইগুড়িতে এইমস স্থাপন করা হলে স্থানীয় অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সমালোচনা ও চ্যালেঞ্জ
কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, (Banglapokkho) জলপাইগুড়িতে এইমস স্থাপনের দাবি যৌক্তিক হলেও, এর বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর আর্থিক বিনিয়োগ এবং জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন। শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে উপযুক্ত জমি খুঁজে পাওয়া একটি চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও, কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট বরাদ্দ এবং রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির উপর এই প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করছে।
জলপাইগুড়িতে (Banglapokkho) বাংলার দ্বিতীয় এইমস-এর দাবিতে বাংলা পক্ষের ৬ জুলাইয়ের মিছিল উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্যসেবার দাবিকে জাতীয় মঞ্চে তুলে ধরবে। এই উদ্যোগ কেবল স্থানীয় মানুষের জন্য উন্নত চিকিৎসা সুবিধার দাবি নয়, বরং কেন্দ্রীয় সরকারের বাংলার প্রতি নীতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। এই মিছিলের ফলাফল এবং কেন্দ্রের প্রতিক্রিয়া আগামী দিনে উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।