কলকাতা: বাংলায় ঋণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। দিন দিন এই পরিস্থিতি হচ্ছে আরও খারাপ থেকে খারাপতর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন আজ যে শিশুটি বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছে, তার মাথার উপরেও ঋণ। পরিসংখ্যান বলছে বাংলার অর্থনীতিকে ঘিরে আবারও উদ্বেগ বাড়ছে। বাড়ছে রাজ্যের আর্থিক চাপ, বাড়ছে সাধারণ মানুষের অজানা দায়। সরকারের দাবি উন্নয়ন, তবে বিরোধীদের দাবি উন্নয়ন নয় ভাতার নাম করে শুধু ঋণ নিয়েই আর্থিক অপব্যবস্থাপনা।
কিন্তু তর্ক পেরিয়ে যে বাস্তবতা বলছে, ২০১১ সালে যখন রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল হয়, তখন মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১.৮৭ লক্ষ কোটি টাকা। আজ ২০২৩–২৪ অর্থবর্ষে সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৩ লক্ষ কোটি টাকা অর্থাৎ মাত্র ১২ বছরে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। সংখ্যায় এই লাফালাফি শুধু রাজস্বের চাপ নয়, ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক দায়ও বহন করে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই ঋণের বোঝা আগামী বছরগুলোতে রাজ্যের অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরও সংকটে ঠেলে দিতে পারে।
শীতের ঢেউ উধাও, ঘন কুয়াশার রাজত্ব বাংলায়
সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হল রাজ্যের মাথাপিছু ঋণের অঙ্ক। ২০১১ সালে মাথাপিছু ঋণ ছিল ২০,৩০০ টাকা। ২০২৩–২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯,০০০ টাকা। অর্থাৎ একজন বাঙালি নাগরিক, সে স্কুল পড়ুয়া হোক, বৃদ্ধ হোক কিংবা সদ্য জন্মগ্রহণ করা শিশু গড় হিসাবে প্রত্যেকের মাথায় এখন প্রায় ৬০ হাজার টাকা ঋণ।
সাধারণ মানুষের কাছে এই সংখ্যানির্ভর তথ্য হয়তো তেমন অনুভূত হয় না, কারণ এই টাকা সরাসরি পরিবারের অ্যাকাউন্টে ডেবিট হয় না। কিন্তু সত্যটা হল সরকারি প্রকল্প, পরিষেবা ব্যয়, রাজ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন, বেতনভাতা, ভর্তুকি সব কিছুতেই ভবিষ্যতে ট্যাক্স বাড়ানো, পরিষেবা মূল্য বৃদ্ধি বা উন্নয়ন ব্যয়ের কাটছাঁটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তা পরোক্ষভাবে শোধ করবে।
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি অভিযোগ করেছে মমতা সরকারের সামাজিক প্রকল্প, কৃষি সহায়তা, কন্যাশ্রী যৌবনশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী সহ একাধিক প্রকল্প গরিব মানুষের স্বার্থেই চালু। কিন্তু এসব প্রকল্প চালিয়ে যেতেও ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে।
বিরোধীদের দাবি প্রকল্পের নামে অপচয়, দুর্নীতি এবং ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা রাজ্যকে আর্থিক খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়েছে। বিরোধীদের যুক্তি, উন্নয়নের নামে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির রাজনীতি চলছে, কিন্তু তার প্রকৃত মূল্য দিতে হচ্ছে রাজ্যের নাগরিকদের। ভবিষ্যতে পেনশন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিনিয়োগের খাতে বড় মাপের সংকোচনের আশঙ্কাও তাঁরা দেখছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আর্থিক সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা এবং ঋণ ব্যবস্থাপনায় স্থিতিশীলতা না আনলে পরবর্তী দশকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্ক, শিল্প বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের হার সবকিছু এই ঋণের বোঝার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। রাজ্য যত বেশি ঋণের চাপে জর্জরিত হবে, তত বেশি চাপ পড়বে রাজস্ব বাড়ানোর দিকে, যার প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় স্পষ্ট দেখা যাবে।
বিরোধীদের প্রশ্ন বাংলার অর্থনীতিতে নতুন সূর্যোদয়ই বা কোথায়? সরকারি প্রকল্পের পাশাপাশি শিল্পক্ষেত্র, কর্মসংস্থান, এবং বেসরকারি বিনিয়োগের উন্নতি না হলে ঋণের চক্র আরও গভীর হবে এমনই মত বিরোধী শিবিরের।
অতএব প্রশ্ন একটাই উন্নয়নের পথে ঋণ নেওয়া যেতেই পারে কিন্তু তার বদলে সরকার কি দিচ্ছে বাংলার মানুষকে শুধুই ভাতা। কিছু প্রকল্প। এর পাশাপাশি কর্মসংস্থান কোথায়, রাজ্যে শিল্প কোথায়, কেন বাংলার মেধাদের বাংলার বাইরে পারি দিতে হচ্ছে ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য এমনটাও প্রশ্ন বাংলার মানুষের।
