বেনারসের আরতির আবহে রবীন্দ্রনগর দুর্গাপুজো, জলদূষণ রোধে বার্তা নিয়ে জেলার সেরা পুজোর খেতাব

শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: দুর্গাপুজোর মণ্ডপে প্রবেশ করতেই মনে হবে আপনি যেন পৌঁছে গেছেন গঙ্গার তীরে পবিত্র বেনারসের ঘাটে। খোলা আকাশের নীচে মণ্ডপের চারদিকে ছড়িয়ে…

শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: দুর্গাপুজোর মণ্ডপে প্রবেশ করতেই মনে হবে আপনি যেন পৌঁছে গেছেন গঙ্গার তীরে পবিত্র বেনারসের ঘাটে। খোলা আকাশের নীচে মণ্ডপের চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে সংস্কৃতির আবহ, আবহসঙ্গীতের সুর আর সন্ধ্যা আরতির ধ্বনি। মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগর সর্বজনীন দুর্গোৎসব (Rabindranagar Durga Puja) কমিটি এ বছর তাদের পুজোর মাধ্যমে শুধুমাত্র শিল্প ও সজ্জার নয়, সমাজে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়ার এক অসাধারণ উদ্যোগ নিয়েছে।

Advertisements

এ বছর এই পুজোর থিম ‘এ বার ভাবতে হবে’। থিমটির মাধ্যমে দর্শকদের মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে জলদূষণের বিপদ ও জল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা। মণ্ডপের ভিতরে প্রবেশ করলে প্রথমেই দেখা মিলবে বেনারস ঘাটের মতো সাজানো পরিবেশে সন্ধ্যা আরতির দৃশ্য। কিন্তু সেই আধ্যাত্মিক আবহ কাটিয়ে যখন আরও ভিতরে এগোবেন, তখন দর্শকের চোখে পড়বে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগৎ—সমুদ্রের তলদেশে ভেসে থাকা নানা জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ।

   

এই বৈপরীত্যই আসলে পুজোর মূল বার্তা। একদিকে গঙ্গার পবিত্র ঘাট, অন্যদিকে জলজ জীবনের অনন্য বৈচিত্র্য—দুটোই আজ বিপন্ন জলদূষণের কারণে। রবীন্দ্রনগর পুজোর থিম দর্শকদের ভাবতে শেখায়, আমাদের অবহেলার কারণে জলজ জীবজগৎ এবং পবিত্র জলাশয়গুলির অস্তিত্বই আজ বিপদের মুখে।

এই ভাবনাকে আরও অর্থবহ করে তুলতে পুজোর মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহৃত হয়েছে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উপকরণ। বাঁশ, খড়, মাটি, কাঠ, পাট ইত্যাদি প্রাকৃতিক জিনিস দিয়ে সাজানো হয়েছে গোটা মণ্ডপ। শিল্পী প্রশান্ত খাটুয়ার নকশা ও সৃজনশীলতায় ফুটে উঠেছে এক চিত্তাকর্ষক ও ভাবনাপ্রবণ সজ্জা।

এ বছর রবীন্দ্রনগর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি পা দিল তাদের ৫৬-তম বর্ষে। পুজোর দীর্ঘ ঐতিহ্য, থিমের গভীর বার্তা এবং নান্দনিক সজ্জার জন্যই এ বছর “বিশ্ববাংলা শারদ সম্মান”-এর বিচারে জেলার সেরা চারটি পুজোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে এই পুজো।

রবীন্দ্রনগরের পাশাপাশি আরও তিনটি পুজো একই সম্মানে ভূষিত হয়েছে। সেগুলি হল—গড়বেতার ধাদিকা সর্বজনীন দুর্গোৎসব, ঘাটাল মহকুমার দাসপুরের সোনাখালি স্কুলপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব সংঘ এবং দাসপুরের কৈগ্যাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব।

পুজোর উদ্যোক্তাদের কথায়, “দুর্গাপুজো কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, সমাজে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার এক বড় মাধ্যম। আমরা চাই, পুজোতে আসা মানুষরা কেবল মণ্ডপ বা প্রতিমা দেখে মুগ্ধ হবেন না, বরং জলদূষণ নিয়ে ভাববেন এবং পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হবেন।”

এইভাবে রবীন্দ্রনগরের দুর্গাপুজো শুধুমাত্র নান্দনিকতার কারণে নয়, সামাজিক বার্তার জন্যও হয়ে উঠেছে বিশেষ। বেনারসের আধ্যাত্মিকতা ও সমুদ্রজগতের বার্তা মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক অনন্য সেতুবন্ধন, যা মানুষকে ভাবায়—“জল মানেই জীবন, তাকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।”