হাওড়া: উত্তর হাওড়ার প্রাচীন বামুনগাছি রেল ব্রিজটি (Bamangachhi Railway Bridge) অবশেষে কার্যত বন্ধ হয়ে গেল ভারী যানবাহনের জন্য। প্রায় ১২০ বছর আগে নির্মিত এই ঐতিহাসিক রেলওয়ে ওভারব্রিজটি এতদিন ধরে সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার কাঠামোগত দুর্বলতা এতটাই বেড়েছে যে এখন তা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে হাওড়া সিটি পুলিশ কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে—সম্প্রতি ছয় চাকার গাড়ি, বিশেষত বাস ও লরির যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই ব্রিজে।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা। ভট্টনগর-ধর্মতলা মিনিবাস, কোনা-হাওড়া রুটের ৫৭ নম্বর বাস-সহ একাধিক রুটের বাসকে এখন ঘুরপথে চালাতে হচ্ছে। বেলগাছিয়া মোড় হয়ে বিকল্প রাস্তায় এই যানবাহন চালানোর ফলে সময় যেমন বাড়ছে, তেমনই যাত্রীদেরও নামতে হচ্ছে বাস থেকে এবং বিকল্প ব্যবস্থায়—অটো, রিকশা কিংবা হেঁটে পৌঁছতে হচ্ছে গন্তব্যে।
বর্ষার মরসুমে বেনারস রোডের জল জমার সমস্যা এমনিতেই যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে। তার উপরে এই নতুন নিষেধাজ্ঞা নিত্যযাত্রীদের ভোগান্তিকে একাধিক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা সালকিয়া, ধর্মতলা, বেলগাছিয়া বা আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করেন, তাঁদের কাছে এই পরিস্থিতি রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক আধিকারিক জানান, “ব্রিজটির কাঠামোগত অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। যেকোনও সময় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আমরা ছয় চাকার গাড়ি ব্রিজে উঠতে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছি। যতক্ষণ না নতুন ব্রিজ সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হচ্ছে, এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।”
এদিকে, পূর্ব রেলের তরফ থেকে বহু আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, এই পুরোনো রেলওয়ে ওভারব্রিজটি ভেঙে ফেলা হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুরোনো ব্রিজটির পাশেই একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে, যা বর্তমানে শেষ পর্যায়ে। পূর্ব রেলের সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন ব্রিজের নীচের অংশের দৈর্ঘ্য ৩৬ মিটার থেকে বাড়িয়ে ৬৬ মিটার করা হয়েছে, যাতে ট্রেন চলাচল আরও মসৃণ হয়।
হাওড়া ডিভিশনের ডিআরএম সঞ্জীব কুমার জানান, “বামুনগাছি রেল ব্রিজের অবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ ছিল। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন ব্রিজ নির্মাণ শুরু করা হয়েছিল। কাজ এখন প্রায় শেষ এবং দ্রুতই তা উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে।”
নতুন ব্রিজ চালু হলে, এলাকার যানচলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে মনে করছে প্রশাসন। তবে ততদিন পর্যন্ত ছয় চাকার গাড়ির উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে এবং যাত্রীদের বিকল্প পথে চলাচল করেই গন্তব্যে পৌঁছতে হবে।