মিলন পণ্ডা, পূর্ব মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। বহু এলাকা জলমগ্ন। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এই দুর্দিনে বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক অনন্য নজির গড়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরার বালিঘাই জগন্নাথ জিউ সেবা সমিতি (Balighai Jagannath Jiu Seba Samiti)।
সংস্থার পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, টানা সাত দিন ধরে বিভিন্ন জলমগ্ন অঞ্চলে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে। বুধবার থেকে এই কর্মসূচির সূচনা হয়েছে। এদিন মনসুরা-২ পঞ্চায়েতের বলরামপুর অঞ্চলে কয়েক হাজার বানভাসী মানুষের হাতে পরিবেশন করা হয়েছে সবজিডাল, সয়াবিন, কুমড়ো ও বাঁধাকপির তরকারি এবং ডিমের ঝোল।
রান্না করা খাবার এগরা বালিঘাই থেকে লরি করে পাঠানো হয়েছে দুর্গত এলাকায়। শিবিরের সূচনা করেন সেবা সমিতির কর্ণধার আশীষ ধাওয়া। উপস্থিত ছিলেন মনসুরা-২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নিমাই পোড়ে, প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য কিংঙ্কর দিগর, সেবা সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও প্রাক্তন উপপ্রধান ধনঞ্জয় সিংহ, যুগ্ম সম্পাদক বিরজাকান্ত প্রধান, সোমনাথ প্রধান, শিশির মাইতি প্রমুখ।
ত্রাণ বণ্টনে সাহায্য করেন ঘাটাল মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস। তিনি নিজে নৌকায় করে দুর্গতদের মাঝে গিয়ে খাবার পৌঁছে দেন। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ৭৪ নম্বর বুথ বনহরিসিংহপুরে রান্না করা খাওয়ার পরবর্তী বিতরণ হবে, যেখানে হাজারেরও বেশি মানুষ উপকৃত হবেন।
শুধু ত্রাণ বিতরণ নয়, মানবিকতার উজ্জ্বল নিদর্শনস্বরূপ, বৃহস্পতিবার সেবাকাজের শেষে মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস’কে রাখি পরিয়ে, স্মারক ও উপহার সামগ্রী দিয়ে সম্মাননা জানান কর্ণধার আশীষ ধাওয়া। তিনি বলেন, “এই ধরনের দুর্যোগের সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক কর্তব্য। প্রশাসনের সহযোগিতায় কাজ করতে পেরে কৃতজ্ঞ।”
স্থানীয় এক বানভাসী বাসিন্দা বলেন, “সত্যিই কৃতজ্ঞ আমরা। এমন সময় যাঁরা পাশে এসে দাঁড়ান, তাঁরাই প্রকৃত সমাজসেবী। সাত দিন ধরে রান্না খাওয়ার দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি সংস্থা দিয়েছে, তা দারুণ উদ্যোগ।”
প্রসঙ্গত, বালিঘাই জগন্নাথ জিউ সেবা সমিতি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একটি সুপরিচিত সমাজসেবামূলক সংগঠন। সংস্থার কর্ণধার আশীষ ধাওয়ার নেতৃত্বে এর আগেও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সামাজিক সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে তারা। করোনা মহামারি, আমফান ও ইয়াস ঝড়ের সময়েও ত্রাণ ও খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছে এই সংগঠন।
এইভাবে সংগঠনের কাজ রাজ্যের সমাজসেবার ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। ঘাটালের মতো বন্যা বিধ্বস্ত এলাকায় খাবার, মানবিকতা ও সহমর্মিতা পৌঁছে দেওয়া নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ।