ছোট ভাই ছেলেমেয়েকে নিয়ে দীঘায় ঘুরতে গিয়েছেন, আর সেই সুযোগেই ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনা। ঘটনা উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা (Bagda) থানার হেলেঞ্চা গ্রাম পঞ্চায়েতের পারকৃষ্ণচন্দ্রপুর এলাকায়। অভিযোগ, বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে লুট করা হয়েছে সোনার গহনা ও নগদ কুড়ি হাজার টাকা। চুরির ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য, তদন্তে নেমেছে বাগদা থানার পুলিশ।
জানা গিয়েছে, পারকৃষ্ণচন্দ্রপুরের বাসিন্দা তপন বিশ্বাস সম্প্রতি তার স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে দীঘায় ঘুরতে গিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই, বাড়িতে তালা বন্ধ ছিল। সকালে তপনের বৌদি, যিনি প্রতিবেশীও বটে, মুরগির খাবার দিতে এসে খেয়াল করেন, বাড়ির একটি জানালার গ্রিল ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। সন্দেহ হওয়ায় তিনি জানিয়ে দেন প্রতিবেশীদের। সবাই মিলে বাড়ির সামনে ভিড় করেন। দ্রুত খবর দেওয়া হয় বাগদা থানার পুলিশকে।
পুলিশ এসে তালা ভেঙে ঘরে ঢোকে। বাড়ির ভিতরের চিত্র দেখে চক্ষু চড়কগাছ সকলের। ঘরের দুইটি দরজার তালা ভাঙা, আলমারি ভাঙা, মেঝে জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জামাকাপড় ও ব্যাগপত্র। খাটের উপর খোলা অবস্থায় পড়ে রয়েছে গহনার বাক্স। তবে তাতে গহনা না থাকায় বোঝা যাচ্ছে, তা লুট হয়েছে।
তপন বিশ্বাসের মা মালতি বিশ্বাস বলেন, “আমার ছেলে বলেছে, আলমারিতে কুড়ি হাজার টাকা ছিল। এছাড়া গহনার পরিমাণ আমি জানি না। আজ সকালে খবর পেয়েই ফোনে জানলাম আমাদের বাড়িতে চুরি হয়েছে।”
এই বাড়িতে শুধু তপন বিশ্বাসদের গহনাই নয়, প্রতিবেশী কবিতা বিশ্বাসের সোনার গহনাও রাখা ছিল বলে জানা যায়। কবিতা দেবী বলেন, “আমার একটি সোনার চেন, দুটি কানের দুল, ও একটি আংটি ছিল। সবকিছু মিলে লক্ষাধিক টাকার গয়না ছিল ওই বাক্সে। সব নিয়ে গেছে চোরেরা।” তবে তপনের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি গহনার মোট মূল্য কত ছিল।
এই চুরির ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ফাঁকা বাড়ি দেখেই পরিকল্পিতভাবে এই চুরি করা হয়েছে। রাতের অন্ধকারে বা ভোরবেলায় জানালার গ্রিল কেটে চোরেরা ঢুকেছে বলে সন্দেহ পুলিশের। আশেপাশের এলাকায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ফাঁকা বাড়ি চিহ্নিত করে নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ।
বাগদা থানার পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারা এই চুরির সঙ্গে জড়িত, তা জানার চেষ্টা চলছে। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি, তবে আমরা বিভিন্ন সূত্র ধরে এগোচ্ছি।”
পুলিশ আরও জানিয়েছে, তারা বহুবার প্রচার করেছে যে, কোথাও গেলে ফাঁকা বাড়ির খবর যেন থানায় জানানো হয়। কিন্তু বহু মানুষ তা মানেন না। তার জেরেই এমন চুরির ঘটনা ঘটে চলেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এলাকায় পুলিশি টহল আরও বাড়ানো হোক, এবং যেসব বাড়ি ফাঁকা থাকে, সেখানে নজরদারি ব্যবস্থা কড়া করা হোক।
বস্তুত, এই ঘটনায় শুধু তপন বা কবিতা বিশ্বাসেরই নয়, গোটা পারকৃষ্ণচন্দ্রপুর এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার আগে স্থানীয় থানায় জানানো এবং বাড়ির আশেপাশে নজরদারি করা এখন অত্যন্ত জরুরি — মনে করছেন অনেকেই।
এখন দেখার, পুলিশের তদন্তে কী উঠে আসে এবং চোরদের ধরতে কতটা সময় লাগে। চুরি হওয়া সোনার গহনা ও টাকা কি আদৌ উদ্ধার হবে? সেই দিকেই নজর এখন এলাকাবাসীর।