আজিজুল হক, এক আপোষহীন সংগ্রামী জীবনের বিদায়

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের অস্তগমন (Azizul Haque)। প্রয়াত হলেন বামপন্থী আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সিপিআই(এম)-এর প্রবীণ নেতা কমরেড আজিজুল হক। তাঁর মৃত্যুতে বামপন্থী আন্দোলনের…

Azizul Haque death

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের অস্তগমন (Azizul Haque)। প্রয়াত হলেন বামপন্থী আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সিপিআই(এম)-এর প্রবীণ নেতা কমরেড আজিজুল হক। তাঁর মৃত্যুতে বামপন্থী আন্দোলনের একটি যুগের অবসান ঘটল।

একজন সৎ, দৃঢ়চেতা এবং আপোষহীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি সর্বদা জনগণের পাশে থেকেছেন।তাঁর জীবন ছিল সংগ্রাম, ত্যাগ এবং নিষ্ঠার এক অপূর্ব নিদর্শন। আজিজুল হকের প্রয়াণে শুধু বামপন্থী আন্দোলনই নয়, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে।

   

আজিজুল হকের জীবন ও রাজনৈতিক পথচলা

আজিজুল হক ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী আন্দোলনের এক অগ্রণী নেতা। তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে। সিপিআই(এম)-এর সদস্য হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে দলের বিভিন্ন স্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বর্ধমানের মেমারি থেকে শুরু করে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন।

তাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিল জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিবেদিত। শ্রমিক, কৃষক এবং সাধারণ মানুষের অধিকারের জন্য তিনি সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। তাঁর আপোষহীন মনোভাব এবং সংগ্রামী চেতনা তাঁকে সকলের কাছে একজন প্রকৃত বিদ্রোহী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

আজিজুল হকের জীবনে বামপন্থী আদর্শ ছিল তাঁর প্রেরণার উৎস। তিনি কখনোই ক্ষমতা বা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য রাজনীতি করেননি। তাঁর লক্ষ্য ছিল সমাজের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তি। তিনি বিশ্বাস করতেন, “হার কেবল হার নয়, শেষ জয়ের সূচনা মাত্র।” এই দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে কঠিন সময়েও অটল রাখত। তিনি সর্বদা বলতেন, “মানুষ বড় বিপন্ন, তাদের পাশে দাঁড়াও।” এই বাণী তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র ছিল।

বামপন্থী আন্দোলনে অবদান

আজিজুল হক বামপন্থী আন্দোলনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ছিলেন শ্রমিক আন্দোলনের একজন শক্তিশালী সংগঠক। কৃষকদের অধিকার, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো জনকল্যাণমূলক বিষয়ে তিনি সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে বহু আন্দোলন সফলতা পেয়েছে।

তিনি শুধু দলের নেতা ছিলেন না, সাধারণ কর্মীদের সঙ্গেও তাঁর গভীর সংযোগ ছিল। তাঁর সহজ-সরল জীবনযাপন এবং মানুষের প্রতি সংবেদনশীলতা তাঁকে সকলের কাছে প্রিয় করে তুলেছিল।তাঁর রাজনৈতিক জীবনে তিনি বহু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। বামপন্থী আন্দোলন যখন পশ্চিমবঙ্গে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে, তখনও তিনি হাল ছাড়েননি।

তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সংগ্রামের মাধ্যমেই পরিবর্তন সম্ভব। তাঁর এই দৃঢ়তা তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।সামাজিক মাধ্যমে শ্রদ্ধাআজিজুল হকের প্রয়াণের পর সামাজিক মাধ্যমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে অনেকেই তাঁর সংগ্রামী জীবনের কথা তুলে ধরেছেন।

Advertisements

রাজনৈতিক প্রভাব

আজিজুল হকের প্রয়াণে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সিপিআই(এম)-এর নেতারা তাঁর মৃত্যুকে একটি অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। দলের একজন নেতা বলেন, “কমরেড আজিজুল হক ছিলেন আমাদের পথপ্রদর্শক। তাঁর আদর্শ আমাদের সামনে পথ দেখাবে।”

তাঁর সংগ্রামী জীবন এবং জনগণের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি পাথেয় হয়ে থাকবে।বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, যখন বামপন্থী আন্দোলন নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তখন আজিজুল হকের মতো নেতার প্রয়াণ দলের জন্য বড় ধাক্কা। তবে তাঁর আদর্শ এবং সংগ্রামের চেতনা বামপন্থী আন্দোলনকে নতুন শক্তি দেবে বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে।তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে তরুণ প্রজন্ম সামাজিক ন্যায় ও সমতার লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

হরিয়ানার নতুন রাজ্যপাল, শপথ নিলেন অসীম কুমার ঘোষ

শেষ শ্রদ্ধা

আজিজুল হকের প্রয়াণে বামপন্থী আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁর জানাজা ও শেষকৃত্যে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন, যা তাঁর জনপ্রিয়তা এবং জনগণের প্রতি তাঁর গভীর সংযোগের প্রমাণ। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন স্থানে শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে।

সিপিআই(এম)-এর কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, “কমরেড আজিজুল হকের প্রয়াণ আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর আদর্শ আমাদের সংগ্রামকে নতুন দিশা দেবে।”

আজিজুল হক ছিলেন একজন সত্যিকারের জননেতা, যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে জনগণের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। তাঁর জীবন ছিল সংগ্রামের এক মহাকাব্য। তাঁর প্রয়াণে বামপন্থী আন্দোলন একজন প্রকৃত যোদ্ধাকে হারালেও, তাঁর আদর্শ এবং ত্যাগের চেতনা চিরকাল আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে।

তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা বলতে পারি, কমরেড আজিজুল হক আমাদের হৃদয়ে চির অমর। তাঁর সংগ্রামী জীবন আমাদের সামনে একটি উজ্জ্বল আদর্শ রেখে গেছে, যা আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।