অয়ন দে, উত্তরবঙ্গ: উত্তরবঙ্গ যেন ক্রমেই হয়ে উঠছে দুষ্কৃতীদের নিরাপদ ঘাঁটি! ময়নাগুড়িতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর লুটের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের এক আতঙ্কজনক ঘটনা ঘটল শিলিগুড়ির শহরতলিতে। প্রধাননগর থানার অন্তর্গত চম্পাশাড়ি মোড়ে এসবিআই-এর একটি এটিএম (ATM) বুথে দুষ্কৃতীদের হানা নতুন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশ্ন তুলে দিল।
ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার গভীর রাতে। স্থানীয়দের দাবি, গভীর রাতে হঠাৎই আওয়াজ পেয়ে তারা সন্দেহ করে কিছু একটা ঘটছে। সকালবেলা এটিএম বুথের ভাঙা দরজা দেখে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। খবর যায় প্রধাননগর থানায়। দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ। দেখা যায়, এটিএম মেশিন ভাঙা এবং ভিতরের ক্যাশ বক্স খালি।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, দুষ্কৃতীরা পেশাদার এবং সংগঠিতভাবে এই কাজটি করেছে। পুরো ঘটনাটি ধরা পড়েছে সিসিটিভি ক্যামেরায়, তবে ফুটেজে দুষ্কৃতীদের মুখ স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে তদন্তকারী দল।
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে এসবিআই কর্তৃপক্ষ এবং এটিএম বুথের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। জানা গিয়েছে, ওই বুথে কোনও নিরাপত্তারক্ষী ছিল না এবং রাতভর কেউ সেখানে নজর রাখেননি। শুধু একটি সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও সেটি ঘটনার সময় কার্যকরভাবে সাহায্য করতে পারেনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “প্রতিদিন এই রাস্তায় প্রচুর মানুষ যাতায়াত করেন। এমন জায়গায় এত সহজে লুট হয়ে যাওয়া খুব চিন্তার বিষয়। এটিএমগুলিতে ২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তা থাকা দরকার।”
প্রধাননগর থানার পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করতে আশপাশের এলাকার ফুটেজও পরীক্ষা করা হচ্ছে। শহরের প্রবেশ ও প্রস্থানপথে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, আশেপাশের জেলার থানাগুলিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি, এই ঘটনার পেছনে কোনও সংঘবদ্ধ লুটের চক্র আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের একটি বিশেষ টিম গঠন করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
ঠিক কত টাকা লুট হয়েছে?
এই প্রশ্নের উত্তর এখনও পর্যন্ত অজানা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি। পুলিশও জানিয়েছে, ক্যাশ লোডিং সংস্থার সঙ্গে কথা বলে তবেই জানা যাবে ঠিক কত টাকা মজুত ছিল এবং কত টাকা লোপাট হয়েছে।
এই ঘটনার পর সাধারণ মানুষ ভীত ও চিন্তিত। অনেকেই বলছেন, যদি এটিএম বুথের মতো নিরাপদ স্থানেও এমন অনায়াসে লুট হয়, তবে রাতের বেলা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কী অবস্থা?
একজন দোকানদার বলেন, “রোজই আমরা এখানে ব্যবসা করি। এই ধরনের ঘটনা আমাদের আতঙ্কিত করে তুলছে। প্রশাসনের উচিত এখনই প্রতিটি এটিএম বুথে স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
ময়নাগুড়ির পর শিলিগুড়ির এই এটিএম লুটের ঘটনা উত্তরবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিল। শহরজুড়ে বেড়ে চলেছে চুরি, লুট ও অপরাধের ঘটনা। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের মধ্যে ভরসা ফিরিয়ে আনা, নাহলে এই ঘটনাগুলি আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।