পশুপ্রেমীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশিকার পরও পশ্চিম বর্ধমান জেলার শিল্পনগরী আসানসোলে ফের ঘটল নৃশংস কুকুর হত্যার ঘটনা। আসানসোলের হিরাপুর থানার পুলিশ ধর্মতলা মোড়ের বাসিন্দা বিকাশ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে (Asansol Man Arrest)। অভিযোগ, তিনি রাস্তার একাধিক কুকুরকে খাবারে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে মেরেছেন। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় চাঞ্চল্যের পাশাপাশি ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
অভিযোগকারিণী সুমিত ভট্টাচার্য, মানিকচাঁদ কলোনি পল্লির বাসিন্দা, শনিবার হিরাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, ২২ অগস্ট গভীর রাতে বিকাশ রাস্তার কুকুরদের খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দেয়। জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগে বিকাশের বাড়ির একটি মুরগিকে নাকি একটি কুকুর কামড়ে মেরে ফেলে। প্রতিশোধস্পৃহা থেকেই তিনি এই নৃশংস কাজ করেন বলে অভিযোগ। সুমিত আরও জানান, বিষ মেশানো খাবার খেয়ে তিনটি কুকুর মারা যায়, দু’টির অবস্থা আশঙ্কাজনক, এবং তিনটি কুকুর এখনও নিখোঁজ।
এই ঘটনায় হিরাপুর থানায় ‘প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস অ্যাক্ট, ১৯৬০’ অনুসারে মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ওই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে।
এলাকায় পৌঁছে পশুপ্রেমীরা ঘটনাস্থল থেকে কুকুরগুলিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্য তারাশঙ্কর নাগ বলেন, ‘আমরা গিয়ে দেখি তিনটি কুকুরের মুখ থেকে ফেনার সঙ্গে রক্ত বেরোচ্ছে। তাদের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। অবিলম্বে ময়নাতদন্তের দাবি জানাই।’ তিনি জানান, দু’টি অসুস্থ কুকুরকে স্থানীয় পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে বাকি তিনটি কুকুরের খোঁজ এখনও মেলেনি।
আসানসোল আদালত সংলগ্ন এলাকায় এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ তুলেছেন আরেক পশুপ্রেমী চন্দনা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ প্রয়োজন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে পুলিশের সঙ্গে আমরা আবারও যোগাযোগ করব। প্রকৃত দোষীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে খাবারে বিষ মিশিয়ে অন্তত তিনটি কুকুরকে মারা হয়েছে। এই ঘটনার পর হিরাপুর, বার্নপুর ও সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বহু স্থানীয় মানুষ এই ঘটনাকে অমানবিক ও নৃশংস বলে মন্তব্য করেছেন।
পশুপ্রেমী সংগঠনগুলির দাবি, সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই পথকুকুরদের প্রতি মানবিক আচরণের জন্য একাধিক নির্দেশিকা জারি করেছে। তবুও এই ধরনের ঘটনা প্রশাসনের নজরদারির অভাবকেই প্রকাশ করছে। তাঁরা আরও দাবি করেছেন, দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি করে অভিযুক্তকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
বর্তমানে অভিযুক্ত বিকাশ মণ্ডল পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। ঘটনাটি নিয়ে পুলিশি তদন্ত জোরদার করা হয়েছে। এই ঘটনার পরে আবারও পশু অধিকার সুরক্ষার দাবিতে শহরজুড়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।