তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বিধানসভায় দলের পরিষদীয় বৈঠকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জনসংযোগ আরও শক্তিশালী করা। মমতা জানিয়েছেন, দলীয় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন, এবং সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে দলের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি দলের বিধায়কদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আপনারা যাতে জনসংযোগ বাড়ান, তবে যেন কোনও মন্তব্যে দল বা সরকার বিব্রত না হয়।’’
মমতার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল দলের নেতাদের আরও মানুষের কাছে পৌঁছানো। তাঁর নির্দেশ ছিল, ‘‘নতুন বিধায়কদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রণাম করুন, কিন্তু তেমন বেশি কথা বলার প্রয়োজন নেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আপনারা যেন বুঝে শুনে প্রশ্ন করেন এবং মন্ত্রীরা যথাযথ উত্তর দিন।’’ মমতার মতে, কোনওরকম অপ্রয়োজনীয় বা বেফাঁস মন্তব্য করলে তা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে, তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
এছাড়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে (Arup Biswas) নতুন দায়িত্ব দেন। অরূপ বিশ্বাসকে একটি নতুন হোয়াটসআপ গ্রুপ (WhatsApp group) তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়, যেখানে সব বিধায়কের (MLAs) কার্যক্রম নজরদারি (monitor) করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘গ্রুপের মাধ্যমে বিধায়কদের কার্যকলাপ মনিটর করা হবে, যাতে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায় এবং দলের শৃঙ্খলা বজায় থাকে।’’ মমতা আরও জানান, গ্রুপটির মাধ্যমে জানা যাবে কোন বিধায়ক কখন কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন—এগুলি সকলের কাছে পৌঁছে যাবে, যাতে দলের মধ্যে কোনও ধরনের অব্যবস্থাপনা না হয়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতির জন্য দলীয় নেতাদের দ্রুত কার্যক্রম শুরু করতে বলেন। তিনি বলেন, ‘‘২০২৬ সালের নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই মাঠে নামুন। আপনারা সকলের ঘরে ঘরে গিয়ে জনসংযোগ বাড়ান।’’ মমতা নির্দেশ দেন, নতুন বিধায়কদের ৭ দিন ধরে তাদের এলাকায় থাকার এবং কাজ শিখতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘নারায়ণ গোস্বামীকে তাঁর এলাকায় থাকতে হবে এবং সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে কিছু ব্লক নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে তা নিজে দেখবেন।’’
মমতা আরও জানান, জেলা স্তরে ছাত্র-যুব সংগঠনগুলো নিয়েও তিনি ব্যক্তিগতভাবে নজর দেবেন। তিনি বলেন, ‘‘কিছু মন্ত্রী এবং বিধায়ক বেফাঁস মন্তব্য করছেন, সেগুলি থেকে বিরত থাকতে হবে।’’ তৃণমূল নেত্রী আরও পরামর্শ দেন, ‘‘যদি বিরোধীরা দিল্লি যেতে না চায়, তাহলে আপনাদেরই সেখানে যেতে হবে।’’
এছাড়া, মমতা বিধায়কদের সতর্ক করে বলেন, ‘‘প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যেন তা সরকারের বিপক্ষে না যায়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মন্ত্রীরা তাদের কাজের বিষয়ে আরও পড়াশুনো করুন, যাতে কোনও ধরনের ভুল ধারণা বা ভুল সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়।’’
মমতার এই বৈঠক থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখা, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা এবং সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে তৃণমূলকে শক্তিশালী করা, আগামীদিনের জন্য দলের প্রধান লক্ষ্য।