Arpita Mukherjee: মায়ের মৃত্যু, প্যারোলে মুক্তি পেলেন পার্থ-সঙ্গিনী অর্পিতা

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) প্যারোলে মুক্তির আবেদন মঞ্জুর হল। কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ আদালত, অর্পিতার মায়ের মৃত্যুর কারণে তাকে পাঁচ দিনের জন্য…

Arpita got bail

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) প্যারোলে মুক্তির আবেদন মঞ্জুর হল। কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ আদালত, অর্পিতার মায়ের মৃত্যুর কারণে তাকে পাঁচ দিনের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষ আদালতের এই সিদ্ধান্তটি মিডিয়া এবং রাজনীতির মহলে বিশেষ আলোচনার সৃষ্টি করেছে, কারণ এই মামলার সঙ্গে যুক্ত আছেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, যিনি একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত।

অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নাম সম্প্রতি বেশ আলোচনায় এসেছে, যখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) ২০২২ সালের জুলাই মাসে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। তাঁর গ্রেফতারির পর, কলকাতার টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে ব্যাপক তল্লাশি চালায় ইডি, যার ফলে সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, বিদেশি মুদ্রা, এবং সোনার গয়না উদ্ধার হয়। টালিগঞ্জের ‘ডায়মন্ড সিটি’ আবাসনে তাঁর ফ্ল্যাট থেকে ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়, যা দেশে নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত ছিল। এই ঘটনার পর, অর্পিতা এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকার ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

   

অর্পিতার গ্রেফতারি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, এবং তার পরবর্তী সময়ে অর্থ উদ্ধার ও পাচারের অভিযোগগুলি সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে যখন পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হন, তখন রাজনৈতিক মহলে একটি বড় প্রশ্ন উঠেছিল—এই দুর্নীতি কিভাবে এক উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে? এর পরেই, অর্পিতার নাম সামনে আসে এবং তার থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ অনেকের কাছেই একটি বড় চমক ছিল।

এখন, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের প্যারোলে মুক্তির আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পরেও বিষয়টি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আদালতের বিশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে, মায়ের মৃত্যুর পর তিনি পাঁচ দিনের জন্য প্যারোলে মুক্তি পাবেন, কিন্তু এটি কেবল তার ব্যক্তিগত দুঃখজনক পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত। তবে রাজনীতির এবং জনগণের মনোভাব অনুযায়ী, এই পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে প্রশ্ন উঠিয়েছে যে, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত কতটা ন্যায়সঙ্গত এবং কীভাবে তা মামলার পরবর্তী অগ্রগতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।

এদিকে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলার বিষয়টি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত মামলার চেয়েও অনেক বৃহত্তর। এটি পশ্চিমবঙ্গের সরকার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার উপর একটি গভীর প্রশ্ন চিহ্ন তুলে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক সময় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বকে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, এবং এই ঘটনায় দলের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগের পর, রাজনীতির অন্দরমহলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। বিশেষ করে, ইডির তল্লাশি এবং উদ্ধৃত অর্থের পরিমাণ দেখিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকারি চাকরির নিয়োগের জন্য ফেঁসে গেছে।

এই ঘটনার পর, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা একযোগে অভিযোগ তোলে, এবং তৃণমূল কংগ্রেসও এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। তবে, এই মামলার তদন্ত কিভাবে এগোবে এবং ভবিষ্যতে এর ফলাফল কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

অর্পিতার প্যারোলে মুক্তির পর, এই ঘটনার আরও তদন্তের দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আদালতের নির্দেশে তাকে পাঁচ দিনের জন্য মুক্তি দেওয়া হলেও, সেই সময়কালে যদি তাঁর পক্ষে কোনো নতুন তথ্য বা প্রমাণ উঠে আসে, তবে তা মামলার ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে। এর পাশাপাশি, এই মামলার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য বিষয়, যেমন ইডি ও সিবিআইয়ের তদন্তের অগ্রগতি, সেই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও জনমত, ভবিষ্যতে কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করবে, তা এখন সময়ের সাথে জানা যাবে।

নিশ্চিতভাবেই, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার ঘটনা নতুন করে রাজ্য রাজনীতি ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে আরও বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করবে, এবং তা পশ্চিমবঙ্গের জনগণের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি করবে—এমনকি সেই প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া সহজ হবে না।