চটের বস্তায় চেপে ঘুরে বেড়াতে চাইছেন অর্জুন

লোকসভা ভোটে নিজের গড় ব্যারাকপুর হাতছাড়া হয়েছে। ক্ষুব্ধ অর্জুন লক্ষ্যভেদ না হওয়ার হতাশায় দুষেছেন নির্বাচন কমিশনকেও। সেই অর্জুনই কী এবার চটের বস্তা আঁকড়ে বাঁচতে চাইছেন?…

arjun singh

লোকসভা ভোটে নিজের গড় ব্যারাকপুর হাতছাড়া হয়েছে। ক্ষুব্ধ অর্জুন লক্ষ্যভেদ না হওয়ার হতাশায় দুষেছেন নির্বাচন কমিশনকেও। সেই অর্জুনই কী এবার চটের বস্তা আঁকড়ে বাঁচতে চাইছেন? ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের হাওয়াতে এখন এরকম কথাই ভাসছে। আর সেই জল্পনায় আরও ইন্ধন জুগিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে অর্জুনের সাম্প্রতিক বৈঠক। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে যে কথা ফলাও করে প্রচার করেছেন খোদ অর্জুন সিং।

এক সময় ব্যারাকপুরে তৃণমূলের রাজনীতি মানেই অর্জুন, আর অর্জুন মানেই ব্যারাকপুরের তৃণমূল। বাম আমলে সিপিএমের প্রবল দাপুটে নেতা তড়িৎ বরণ তোপদারের সঙ্গে টক্কর দিয়ে ২০০১ সালে প্রথম হয়েছিলেন ভাটপাড়ার বিধায়ক, সেই থেকে ২০১৬ অব্দি টানা চারবার। তারপর দল পাল্টে বিজেপিতে গিয়ে হলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ। ২০১৯-এর উপনির্বাচন বা ২০২১-এ প্রবল সবুজ সুনামির মধ্যেও ভাটপাড়ায় জিতিয়ে এনেছেন ছেলে পবনকে।

   

তারপরে ব্যারাকপুরের পাশের গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। ২০১৯-এর নির্বাচনের পরপরই নৈহাটী-ভাটপাড়া জুড়ে প্রবল গন্ডগোল, সন্ত্রাসের পরিস্থিতি । তবে অদ্ভুতভাবে অভিযোগের তীর অর্জুনের দিকেই। শেষমেশ আবারও বিজেপি ছেড়ে পুরনো ঘর, তৃণমূলে ফিরে এসেছিলেন। ২৪-এর লোকসভায় টিকিটের আশা করেও টিকিট না মেলায় আবার ফিরে গিয়েছেন বিজেপিতে। কিন্তু অবশেষে বিজেপির টিকিটেই হার মানতে হল অর্জুনকে।

কিন্তু হেরেও যেন হার মানতে চাইছেন না অর্জুন সিং। যে চট শ্রমিক মহল্লার সংগঠনকে পুঁজি করে এক সময় রাজনীতিতে উত্থান ঘটেছিল তাঁর, আবারও সেই ঘরানাতেই কি তিনি ফেরত যেতে চাইছেন? কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রী গিরিরাজ সিং-এর সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছেন অর্জুন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে সেই কথা ফলাও করে প্রচার করেছেন। তাঁর বক্তব্য ব্যারাকপুরের চট শিল্পকে পুনর্জীবিত করতে হবে। তাঁর দাবি, পাটের বস্তা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১০০% বাধ্যতামূলক করতে হবে। সেই সাথে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের পাট শিল্পের প্রতি চরম উদাসীনতার অভিযোগ এনে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বলে বক্তব্য অর্জুনের।

কল্যাণের ‘বকা’ খেয়ে পালিয়ে যাওয়া কাঞ্চন এখনও ভয়েই যাচ্ছেন না উত্তরপাড়ায়?

এরপরও কী হারানো জমি ফেরত আসবে অর্জুনের? উত্তর লুকিয়ে রয়েছে ভাটপাড়ার পাশের বিধানসভা শ্যামনগরে। শ্যামনগরের বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের সঙ্গে যে আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক অর্জুনের, সেটা সবাই জানে। সেই সঙ্গে গোটা ব্যারাকপুর বিশেষ করে ভাটপাড়া, শ্যামনগর, নৈহাটির কোনক্রমে টিকে থাকা চটকল গুলির শ্রমিক মহল্লায় সোমনাথ শ্যামের প্রভাব যে এখন তুঙ্গে সেটা অস্বীকার করা যায় না।

শ্যামনগরের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম, বীজপুরের বিধায়ক সুবোধ অধিকারী, নৈহাটি প্রাক্তন বিধায়ক তথা ব্যারাকপুরের বর্তমান সাংসদ পার্থ ভৌমিক, এই ত্রয়ীর বিরোধিতার মুখে শোনা যায় এবার টিকিটই পাননি অর্জুন। এবার বিরোধিতার রাজনীতিতে ব্যারাকপুরে অর্জুনকে আদৌ টিকতে দেবে কি এই তিনজনের জুটি? চটের বস্তা দিয়ে এই ত্রয়ীর মোকাবিলা করতে পারবেন কি অর্জুন? এরকম হাজারো প্রশ্ন এখন ভেসে বেড়াচ্ছে ব্যারাকপুরের আনাচে-কানাচে। যার উত্তর সম্ভবত অর্জুনেরও জানা নেই।