বোলপুর: বীরভূম জেলার রাজনীতিতে যেন ফের নিজের স্বমহিমায় ফিরে আসছেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট। দলের জেলা সভাপতি পদ হারানোর পর অনেকটাই অন্তরালে চলে যাওয়া এই নেতা, ফের সক্রিয় ময়দানে, এবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত কর্মসূচির মঞ্চে (Anubrata Mondal Political Comeback)। শনিবার বোলপুরে রাজ্য সরকারের ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ শিবিরে তাঁকে দেখা গেল রাজ্য মন্ত্রী, প্রশাসনিক কর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এক সারিতে।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রতকে বীরভূম জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেন। সেই সিদ্ধান্তকে ঘিরেই শুরু হয়েছিল জেলায় ‘কেষ্টর প্রত্যাবর্তন’-এর জল্পনা। এবার প্রশাসনিক কর্মসূচিতেও তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি সেই সম্ভাবনাকে আরও পোক্ত করল।
‘সমাধান শিবিরে’ কেষ্টর সক্রিয়তা
শনিবার বোলপুর শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের টাউন লাইব্রেরি চত্বরে আয়োজিত ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ শিবিরে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, মহকুমাশাসক, পুরসভার চেয়ারম্যান-সহ একাধিক প্রশাসনিক আধিকারিক। রাজ্য গ্রামোন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অনুব্রতও।
নিকাশি, জল সরবরাহ, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, স্কুল সংস্কার, বাজার উন্নয়ন, সৌন্দর্যায়ন, আলোর ব্যবস্থা, এমন নানান ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে সাধারণ মানুষ তাঁদের বক্তব্য জানান শিবিরে। আর সেইসব অভিযোগ-পরামর্শ নোট করে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন অনুব্রত এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
অনুব্রত বলেন, “এই প্রকল্পে মানুষের অভাব-অভিযোগ সরাসরি শুনে দ্রুত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। আমি নিজেও নজরদারি রাখব। মুখ্যমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটি উদ্যোগের জন্য।”
দলীয় প্রাসঙ্গিকতায় নতুন মোড়
গত এক বছরে অনুব্রতর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জেলাজুড়ে নানা টানাপড়েন চলেছে। জেলা সভাপতির পদ খোয়ানো, দলের মধ্যে কোণঠাসা হওয়া, আইসিকে কটূক্তির ঘটনায় বিতর্ক ও ক্ষমা—সব মিলিয়ে তিনি কার্যত আড়ালেই ছিলেন। এমনকি, ২১ জুলাই ধর্মতলার সমাবেশেও তাঁর অনুপস্থিতি জল্পনা বাড়িয়েছিল।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বীরভূম সফরে অনুব্রতের সঙ্গে একান্ত বৈঠক এবং পরে তাঁকে কোর কমিটির আহ্বায়ক করার সিদ্ধান্ত জেলা রাজনীতিতে ইঙ্গিত দেয়, কেষ্ট এখনও দলের জন্য প্রাসঙ্গিক। এবার সরকারি কর্মসূচিতেও তাঁকে সামনে আনা, সেই ‘প্রাসঙ্গিকতা’-কে কার্যত প্রতিষ্ঠা করল বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
ফিরে আসছেন ‘পুরনো কেষ্ট’?
রাজনীতির ময়দান থেকে দীর্ঘ সময় দূরে থাকার পর আবার অনুব্রতের প্রশাসনিক ও দলীয় মঞ্চে দৃশ্যমান হওয়া নিঃসন্দেহে একটি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা। বিশেষ করে পঞ্চায়েত এবং পরবর্তী নির্বাচনী প্রস্তুতির প্রেক্ষিতে বীরভূমে তাঁর ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, এখন সেটাই দেখার।