জামাইষষ্টীতে অমিত বরন কলকাতায়, দুদিনে ঠাসা কর্মসূচি

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহ (amit-shah) আজ, ৩১ মে ২০২৫, শনিবার রাতে কলকাতায় পৌঁছবেন। তাঁর এই সফর পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার…

amit-shah in kolkata

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহ (amit-shah) আজ, ৩১ মে ২০২৫, শনিবার রাতে কলকাতায় পৌঁছবেন। তাঁর এই সফর পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শাহের (amit-shah) এই সফরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি রয়েছে, যা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই সফরের প্রস্তুতি হিসেবে রাজ্য বিজেপি ইতিমধ্যেই জোরকদমে কাজ শুরু করেছে।

কর্মসূচির বিবরণ (amit-shah)

১ জুন, রবিবার অমিত শাহের (amit-shah) কলকাতা সফরের প্রধান আকর্ষণ হল নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে বিজেপির একটি গুরুত্বপূর্ণ দলীয় সভা। এই সভায় প্রায় ১০ হাজার দলীয় কর্মী ও সমর্থকের উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই সভায় অংশগ্রহণের জন্য বিধায়ক ও নেতাদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করেছেন। এই সভার মাধ্যমে বিজেপি তাদের সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি আগামী বিধানসভা নির্বাচনের রণনীতি স্পষ্ট করতে চায়। তবে এই দলীয় সভায় আমন্ত্রণ পাননি দিলীপ ঘোষ।

   

এছাড়া, অমিত শাহ (amit-shah) স্বামী বিবেকানন্দের পৈতৃক ভিটায় যাবেন বলে জানা গেছে। উত্তর কলকাতায় অবস্থিত এই ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের মাধ্যমে তিনি স্বামীজির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এই কর্মসূচি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

আরজি কর ঘটনা: সাক্ষাৎ নিয়ে জল্পনা

শাহের (amit-shah) এই সফরে আরজি কর হাসপাতালে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের সম্ভাবনা নিয়ে তীব্র জল্পনা চলছে। নির্যাতিতার বাবা ই-মেইলের মাধ্যমে শাহের সঙ্গে সাক্ষাতের আবেদন জানিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ের সঙ্গে ঘটে যাওয়া জঘন্য ঘটনার পর তাঁরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং সাহায্যের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। যদিও এই সাক্ষাৎ হবে কিনা, তা নিয়ে এখনও কোনও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিজেপির সাংগঠনিক রণনীতি

অমিত শাহের (amit-shah) এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হল পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও মজবুত করা। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টিতে জয়লাভ করলেও, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দল প্রত্যাশিত ফল করতে ব্যর্থ হয়। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন সংখ্যা আরও কমে ১২-তে দাঁড়ায়। এই প্রেক্ষাপটে, শাহের সফর ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য দলের প্রস্তুতি জোরদার করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ।

রাজ্য বিজেপির অন্দরে আদি-নব্য কোন্দল এবং সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে শাহ বিরক্ত বলে জানা গেছে। তিনি এই সফরে রাজ্য নেতাদের কাছ থেকে সরাসরি রিপোর্ট নেবেন এবং দলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষার তথ্যের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির মিল খুঁজবেন।

জামাইষষ্ঠীর সঙ্গে সমাপতন

অমিত শাহের (amit-shah) সফরের দিনটি জামাইষষ্ঠীর সঙ্গে মিলে যাওয়ায় রাজনৈতিক মহলে হালকা হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপির বিধায়কদের মধ্যে অনেকেই এই দিনে দলীয় সভায় উপস্থিতি এবং পারিবারিক দায়িত্ব পালনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। তবে, শুভেন্দু অধিকারী স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, সভায় উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।

প্রস্তুতির তোড়জোড়

শাহের (amit-shah) সফরকে কেন্দ্র করে কলকাতায় ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। বিমানবন্দর থেকে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম পর্যন্ত রাস্তাগুলো বিজেপির পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী এবং সুকান্ত মজুমদার সহ নেতৃত্ব স্থানগুলো পরিদর্শন করে নিরাপত্তা ও অন্যান্য ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছেন।

Advertisements

রাজনৈতিক তাৎপর্য

অমিত শাহের (amit-shah) এই সফর পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই রাজ্যে বিজেপি তাদের প্রভাব বাড়াতে চায়। তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই শাহকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “ভোট এলে অমিত শাহ ডেলি প্যাসেঞ্জারি করবেন।” তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের প্রাপ্য ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়ার দাবি তুলেছেন।

অন্যদিকে, সিপিআই(এম)-এর নেতা সুজন চক্রবর্তী শাহের সফর নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছেন, “বিজেপি যতবার বাংলায় বড় লক্ষ্যের কথা বলে, ততবারই তারা হেরেছে।” তিনি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ‘২০০ আসন’ লক্ষ্যের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেছেন।

নির্বাচন আবহে বামেদের ট্রাম্প কার্ড ইসলাম প্রীতি

অনুপ্রবেশ ইস্যুতে সরব

শাহের (amit-shah)পূর্ববর্তী সফরগুলোতে তিনি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের ইস্যুকে প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ২০১৮ সালে কলকাতার এক জনসভায় তিনি বলেছিলেন, “বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীরা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক।” তিনি এনআরসি-র মতো পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন। এই সফরেও তিনি এই ইস্যুতে সরব হতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

অমিত শাহের কলকাতা সফর বিজেপির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের সভা, স্বামী বিবেকানন্দের পৈতৃক ভিটা পরিদর্শন এবং সম্ভাব্য আরজি কর নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এই সফরকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।

বিজেপি এই সফরের মাধ্যমে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে ২০২৬ সালের নির্বাচনে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে চায়। তবে, তৃণমূল ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনা এবং রাজ্যের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি শাহের এই সফরকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।