কলকাতা: ভোটার তালিকা সংশোধনের মরসুমে ফের অনিয়মের অভিযোগে উত্তপ্ত রাজ্য। অভিযোগ, বুথ লেভেল অফিসার (BLO) বা মাঠপর্যায়ের সরকারি কর্মীদের জায়গায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনামুরেশন ফর্ম দিচ্ছেন রাজনৈতিক দলের এজেন্টরা! এই অভিযোগ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (CEO) দপ্তরে পৌঁছতেই নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। জেলাশাসকদের ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গিয়েছে, একাধিক জেলা থেকে কমিশনের কাছে অভিযোগ এসেছে যে ভোটার তালিকা আপডেটের সময় সরকারি BLO-দের দেখা যায়নি, বরং তাঁদের হয়ে রাজনৈতিক দলের কিছু সক্রিয় সদস্য ফর্ম বিলি করছেন। শুধু তাই নয়, অভিযোগ উঠেছে কেউ কেউ নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যও সংগ্রহ করছেন, যা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা, সংশোধন করা বা তথ্য যাচাইয়ের দায়িত্ব একমাত্র বুথ লেভেল অফিসারের। তাঁরা সরকারি পরিচয়পত্রসহ মাঠে কাজ করেন এবং তাঁদের প্রতিটি কাজ নিরীক্ষণ করে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন আধিকারিক। BLO ছাড়া অন্য কারও পক্ষে এই দায়িত্ব পালন করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছেন, “যদি কোথাও রাজনৈতিক দলের এজেন্টরা এনামুরেশন ফর্ম বিলি করেন বা ভোটার তালিকার কাজে হস্তক্ষেপ করেন, তাহলে সেটি গুরুতর অপরাধ বলে গণ্য হবে। জেলার প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে।”
অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলির দাবি, শাসক দলের কর্মীরা প্রশাসনের আশ্রয়ে ভোটার তালিকার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছেন। তাঁদের বক্তব্য, এতে গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতির ওপর প্রভাব পড়ছে। এক বিরোধী নেতার কথায়, “যখন ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো সংবেদনশীল কাজ রাজনৈতিক দলের হাতে চলে যায়, তখন নিরপেক্ষতা বলে কিছু থাকে না।”
শাসক দলের পাল্টা দাবি, “যেখানে BLO সময়মতো পৌঁছাতে পারছেন না, সেখানে সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে কিছু কর্মী এগিয়ে গেছেন। এতে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।”
তবে কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তি বা প্রতিনিধি BLO-র কাজ করতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিটি বুথ এলাকায় নিয়মিত নজরদারি করা হবে, যাতে কেউ বেআইনিভাবে ভোটার তালিকার কাজে হস্তক্ষেপ না করতে পারে।
রাজ্যজুড়ে নভেম্বরের মাঝামাঝি শুরু হতে চলেছে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন অভিযান। BLO-রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করবেন, ভুল সংশোধন করবেন এবং নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত করবেন। কমিশনের তরফে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে “কেউ যদি দেখে থাকেন রাজনৈতিক দলের কেউ ফর্ম বিতরণ করছেন বা তথ্য নিচ্ছেন, তাহলে অবিলম্বে স্থানীয় নির্বাচন অফিসে জানান।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযোগ শুধু প্রশাসনিক নয়, তা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তাপও বাড়াতে পারে। কারণ, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত অনিয়ম ভবিষ্যতের নির্বাচনী ফলাফলের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
এখন কমিশনের কড়া নজর প্রতিটি জেলায়। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, “নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করাই আমাদের অগ্রাধিকার। যে কোনও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে জনগণের অধিকারকে সুরক্ষিত রাখা হবে।”

