ফেলো কড়ি, পাও ভারতের ভোটার কার্ড (Voter Card)—বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসে এমনই সহজে কীভাবে কেউ ভোটার হতে পারেন? কাকদ্বীপ থেকে উঠে আসা সাম্প্রতিক অভিযোগে মাথায় হাত প্রশাসনের। ভয়াবহ এই চিত্র সামনে এসেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ কেন্দ্র থেকে। আর এই অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্ব।
সুজন সরকার নামে এক ব্যক্তি, যিনি নিজেই স্বীকার করছেন যে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, জানাচ্ছেন—তাঁর নাম কাকদ্বীপের ভোটার তালিকায় তুলতে তিনি ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন তৃণমূল নেতাকে। এমনকী অর্জুন দাস নামে আরেক বাংলাদেশি নাগরিকের অভিযোগ, তৃণমূলের স্থানীয় কর্মী কাশীনাথ বিশ্বাস তাঁর কাছে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে অর্থ দাবি করেন।
কাশীনাথ বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন বটে, তবে নিজের বক্তব্যে তুলে আনেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশিস দাসের নাম। কাশীনাথের সাফ কথা—”আমার নেতা দেবাশিস দাস, ওঁর নির্দেশেই কাজ করি।”
এই দেবাশিস দাস কে? অভিযোগ উঠেছে, এর আগেও তিনি বিতর্কে জড়িয়েছেন। বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনের নেতা নিউটন দাসের সঙ্গে তাঁর ছবি আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল। নিউটন দাস, যাঁর নাম ভারতের ভোটার তালিকাতেও ছিল, তিনিও ছিলেন বাংলাদেশি নাগরিক। এবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন দেখা যাচ্ছে অর্জুন দাস ও সুজন সরকারের ক্ষেত্রে।
এদিকে দেবাশিস দাস অর্জুন দাসকে চেনার কথা অস্বীকার করেছেন। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন, কাকদ্বীপে TMCP-র সাংগঠনিক দায়িত্বে তিনি রয়েছেন। তাঁর দাবি, “যে কেউ আমার নাম বললেই তো আমি দায়ী নই।”
রাজনৈতিক মহলে স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তুঙ্গে। বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, “তৃণমূল এখন জাতীয় দলের মর্যাদা হারিয়েছে। কিন্তু তারা এমন কর্মী তৈরি করতে পেরেছে, যারা আন্তর্জাতিক কর্মী। যারা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল করে, আবার বাংলাদেশে গিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে!”
এই গোটা ঘটনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই ঘটনা রাজ্যের ভোটার তালিকা যাচাই নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিল। সীমান্তবর্তী এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং পরে সেইসব বাসিন্দাদের ভোটার করে তোলা যে কেবল নিরাপত্তার প্রশ্নই নয়, তা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোরও অবমাননা।
আপাতত কাকদ্বীপের এই অভিযোগ ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর, তদন্তের দাবি উঠেছে নানা মহল থেকে। প্রশাসন যদি এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় চক্রান্ত সামনে আসতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে।