Assembly Elections 2026: শাসকের মুসলিম ভোটে থাবা বসাতে বঙ্গের সব আসনে লড়াইয়ে আইএমআইএম

আসাদুদ্দিন ওয়াইসির নেতৃত্বাধীন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (আইএমআইএম) আগামী বছরের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের (Assembly Elections 2026) আগে রাজ্যে তাদের উপস্থিতি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলটি রাজ্যব্যাপী…

AIMIM Gears Up for West Bengal Assembly Elections 2026

short-samachar

আসাদুদ্দিন ওয়াইসির নেতৃত্বাধীন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (আইএমআইএম) আগামী বছরের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের (Assembly Elections 2026) আগে রাজ্যে তাদের উপস্থিতি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলটি রাজ্যব্যাপী সদস্যতা বৃদ্ধির জন্য একটি ফোন নম্বর চালু করেছে এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে জোরকদমে কাজ শুরু করেছে। আইএমআইএম-এর নেতা মোহাম্মদ ইমরান সোলাঙ্কি এনডিটিভি-কে জানিয়েছেন, “বাংলায় আমাদের প্রায় তিন লক্ষ সদস্য রয়েছে এবং ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা শুধু মালদা এবং মুর্শিদাবাদ থেকে প্রায় দেড় লক্ষ ভোট পেয়েছি।”

   

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আইএমআইএম বাংলায় তাদের প্রথম পদক্ষেপ রেখেছিল, কিন্তু সেই সময় তারা কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারেনি। দলটি মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর দিনাজপুর জেলার সংখ্যালঘু প্রধান সাতটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল, যা রাজ্যের মোট ২৯৪টি আসনের তুলনায় নগণ্য। তবে এবার দলটির পরিকল্পনা অনেক বড় এবং তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে ২০২৬ সালের নির্বাচনে তারা ভিন্ন ফলাফল দেখাবে।

Also Read | ২৬ শের বিধানসভাকে সামনে রেখে বঙ্গ সফরে গৃহমন্ত্রী  

 সোলাঙ্কি বলেন, “আমরা গত চার বছর ধরে নীরবে মাটির স্তরে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আমরা সব আসনে প্রার্থী দিতে চাই এবং ইতিমধ্যে ব্লক স্তরে কাজ শুরু করে দিয়েছি।” এই লক্ষ্য পূরণের জন্য দলটি জেলায় জেলায় দ্বারে দ্বারে গিয়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়াও, জেলাগুলিতে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হচ্ছে, যা তাদের প্রচার কৌশলের একটি অংশ।

ঈদের পর আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বাংলায় আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি নির্বাচনের আগে রাজ্যে একাধিক সমাবেশে অংশ নেবেন। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ মুসলিম। এই বিপুল সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে আইএমআইএম তাদের রাজনৈতিক ভিত্তি মজবুত করতে চায়।

আইএমআইএম-এর কৌশল ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
আইএমআইএম-এর এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। মি. সোলাঙ্কি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর হিন্দু পরিচয় নিয়ে প্রচার করছেন, বিজেপি একটি ভিন্ন খেলা খেলছে, কিন্তু এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শুধু জনগণ। ভোটারদের একটি বিকল্প প্রয়োজন। উত্তর বঙ্গ এবং মালদায় আমাদের শক্তিশালী সমর্থন ভিত্তি রয়েছে।” তিনি দাবি করেছেন যে রাজ্যের প্রধান দলগুলির মধ্যে যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে, তাতে সাধারণ মানুষের কথা ভুলে যাওয়া হচ্ছে এবং আইএমআইএম সেই শূন্যতা পূরণ করতে চায়।

পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যা অনেক আসনে নির্বাচনী ফলাফলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলাগুলিতে সংখ্যালঘু ভোটারদের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মালদা এবং মুর্শিদাবাদে আইএমআইএম-এর দেড় লক্ষ ভোট পাওয়ার পর দলটি এই অঞ্চলগুলিকে তাদের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে এবার তারা শুধু সংখ্যালঘু প্রধান আসনেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, বরং রাজ্যের ২৯৪টি আসনেই প্রার্থী দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করছে।

২০২১ সালের নির্বাচনে আইএমআইএম-এর সীমিত প্রভাবের পেছনে অনেকেই মনে করেন যে দলটির সাংগঠনিক কাঠামো তখনও পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। কিন্তু গত চার বছরে তারা ব্লক স্তরে কাজ করে নিজেদের শক্তিশালী করেছে। দলটির নেতারা বিশ্বাস করেন যে এই প্রস্তুতি তাদের ২০২৬ সালে ভালো ফলাফল এনে দেবে।

মমতা ও বিজেপির মধ্যে আইএমআইএম-এর অবস্থান
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেস এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দুটি প্রধান শক্তি হিসেবে আধিপত্য বিস্তার করছে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটের উপর নির্ভর করে ক্ষমতায় টিকে আছেন। তবে সম্প্রতি তিনি তাঁর হিন্দু পরিচয়কে সামনে এনে ভোটারদের একটি বড় অংশকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন বলে আইএমআইএম-এর অভিযোগ। অন্যদিকে, বিজেপি হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা নিয়ে রাজ্যে তাদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

আইএমআইএম নেতা মি. সোলাঙ্কি মনে করেন যে এই দুই দলের মধ্যে চলা রাজনৈতিক খেলায় সাধারণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপি নিজেদের মতো করে ভোটের রাজনীতি করছে, কিন্তু জনগণের জন্য কে ভাবছে? আমরা সেই বিকল্প হতে চাই।” তিনি দাবি করেছেন যে উত্তর বঙ্গ এবং মালদায় তাদের শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে, যা ২০২৬ সালে তাদের সাফল্য এনে দিতে পারে।

প্রচার ও সংগঠনের নতুন পদক্ষেপ
আইএমআইএম-এর প্রচার কৌশলও বেশ আক্রমণাত্মক। দ্বারে দ্বারে সদস্য সংগ্রহ অভিযানের পাশাপাশি তারা জেলায় জেলায় ইফতার পার্টির আয়োজন করছে। এই ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়। ঈদের পর আসাদুদ্দিন ওয়াইসির বাংলা সফর এই প্রচারকে আরও জোরদার করবে। তিনি রাজ্যের বিভিন্ন অংশে সমাবেশ করে দলের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা জনগণের কাছে তুলে ধরবেন।

এছাড়াও, দলটি শুধু সংখ্যালঘু ভোটের উপর নির্ভর করতে চায় না। তারা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। অতীতে আইএমআইএম অন্যান্য রাজ্যে হিন্দু এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রার্থীদেরও মনোনয়ন দিয়েছে, এবং বাংলাতেও তারা এই কৌশল অবলম্বন করতে পারে।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
আইএমআইএম-এর পক্ষে ২৯৪টি আসনে প্রার্থী দেওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তৃণমূল এবং বিজেপির মতো শক্তিশালী দলগুলির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গেলে তাদের সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও মজবুত করতে হবে। এছাড়াও, বাংলার মুসলিম ভোটাররা ঐতিহ্যগতভাবে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মতো দলগুলির প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে এসেছে। এই ভোট ব্যাঙ্কে ভাঙন ধরানো আইএমআইএম-এর জন্য সহজ হবে না।

তবে দলটির নেতারা আশাবাদী। তারা বিশ্বাস করেন যে গত চার বছরের নীরব প্রস্তুতি এবং স্থানীয় স্তরে কাজ তাদের একটি শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। মালদা এবং মুর্শিদাবাদে তাদের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল এই আশার প্রমাণ।

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আইএমআইএম-এর পরিকল্পনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে। তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে চলা দ্বিমুখী লড়াইয়ে তাদের প্রবেশ একটি বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে আসতে পারে। আসাদুদ্দিন ওয়াইসির নেতৃত্বে দলটি যদি তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সব আসনে প্রার্থী দিতে পারে এবং জনগণের মন জয় করতে সক্ষম হয়, তবে বাংলার রাজনৈতিক দৃশ্যপটে একটি বড় পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। ভোটাররা এই নতুন বিকল্পকে কীভাবে গ্রহণ করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।