তৃণমূলের চাপ বাড়িয়ে বাংলায় লড়াইয়ের ঘোষণা AIMIM-এর

এ যেন বাংলা রাজনীতির মঞ্চে নতুন সমীকরণের আঁচ। যেমন প্রবাদ— “তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে”। ঠিক তেমনই বাংলার মাটিতে গোপনে শিকড় বাড়াচ্ছে আসাদুদ্দিন ওয়াইসির…

AIMIM Bold Move to Contest All 294 Seats in 2026 West Bengal Elections Challenges TMC

এ যেন বাংলা রাজনীতির মঞ্চে নতুন সমীকরণের আঁচ। যেমন প্রবাদ— “তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে”। ঠিক তেমনই বাংলার মাটিতে গোপনে শিকড় বাড়াচ্ছে আসাদুদ্দিন ওয়াইসির নেতৃত্বাধীন সর্বভারতীয় মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM)। দলের রাজ্য নেতৃত্বের দাবি, সংখ্যালঘুদের মধ্যে তাদের সমর্থন বাড়ছে, আর সেই ভরসাতেই ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে তারা।

দলের রাজ্য সভাপতি ইমরান সলাঙ্গির কথায়, “রাজ্যের প্রতিটি আসনেই আমরা প্রার্থী দেব। বাংলার প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি ব্লকে আমাদের সাংগঠনিক কাজ চলছে। মুসলিম সমাজ আমাদের প্রতি আস্থা রাখছে।”

   

একুশ থেকে ছাব্বিশ— AIMIM-এর রাজ্য রাজনীতিতে উঁকি

ওয়াইসির AIMIM মূলত তেলেঙ্গনার শক্তিশালী দল। তবে এখন দলীয় লক্ষ্য জাতীয় বিস্তার। হায়দরাবাদের সাংসদ হিসেবে পরিচিত হলেও, আসাদুদ্দিন ওয়াইসি সারা দেশেই সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের অন্যতম মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন। বাংলার মুর্শিদাবাদ, মালদা, বীরভূম ও উত্তর ২৪ পরগনার একাংশে ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়েছে AIMIM। সভা, সমিতি, স্থানীয় ক্যাডার গঠন— সবেতেই জোর দিচ্ছে তারা।

Also Read | মমতা-বিরোধিতায় বাংলায় আসছেন আসাদুদ্দিন ওয়াইসি

একুশের বিধানসভা ভোটে সাত আসনে প্রার্থী দিয়েছিল AIMIM। তবে কারও জমানত রক্ষা হয়নি। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি সংখ্যালঘু ভোটারদের সতর্ক করে বলেছিলেন— “হায়দরাবাদের দলের কথা শুনবেন না।” সেসময় তৃণমূলের ডাকেই বড় অংশের সংখ্যালঘু ভোট একজোট হয়েছিল, যার ফলে AIMIM কার্যত ব্যর্থ হয়। তবে ইমরান সলাঙ্গির দাবি, “পরিস্থিতি বদলেছে। বাংলার মুসলিমরা আর ভয় পায় না। তারা জানে, বিজেপি-তৃণমূল উভয়েই তাদের স্বার্থকে অবহেলা করছে।”

AIMIM-এর অভিযোগ: তৃণমূল মুসলিমদের বঞ্চিত করছে
সলাঙ্গি অভিযোগ করেছেন, ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত আন্দোলনে AIMIM-কে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের মারধর করা হয়েছে ও গ্রেফতারও করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূল সরকার ইমাম ভাতা দিয়ে মুসলিম সমাজকে ভুলিয়ে রাখছে। কিন্তু বাস্তবে এই অর্থ আসে ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে, অর্থাৎ মুসলিম সমাজের নিজেদের সম্পদ থেকেই। অন্যদিকে সরকারি টাকায় মন্দির নির্মাণ হচ্ছে। এটি স্পষ্ট বৈষম্য।”

AIMIM নেতৃত্ব মনে করছে, এই ক্ষোভ এখন সংখ্যালঘুদের মনের ভেতর জমে উঠছে। ফলে আগামি নির্বাচনে মুসলিম ভোটের একটি বড় অংশ তাদের দিকে আসবে।

মমতার কৌশল ও AIMIM-এর চ্যালেঞ্জ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ধরে রেখেছেন। বিশেষ করে মুর্শিদাবাদ-মালদার মতো মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তি অনেকাংশেই এই ভোটের উপর নির্ভরশীল। AIMIM-এর উত্থান সেই সমীকরণে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

Advertisements

Also Read | ‘বাংলাদেশি ভাষা’তেই মোদীর বার্তা, বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব বলছেন ছাড়ুন তো ওসব!

তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, AIMIM যতই মুসলিম ভোটে ভাগ বসানোর চেষ্টা করুক, বাংলার বাস্তবতা হায়দরাবাদ বা বিহারের মতো নয়। এখানে সংখ্যালঘুরা বিজেপি-বিরোধিতাকে বড় অগ্রাধিকার দেয়। AIMIM-এর লড়াইয়ে মুসলিম ভোট বিভক্ত হলে তার লাভ তৃণমূল নয়, বরং বিজেপির ঝুলিতে যেতে পারে। এই কারণেই AIMIM-কে বিজেপির ‘বি টিম’ বলে কটাক্ষ করছে বিরোধীরা।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: AIMIM বিজেপির হাত শক্ত করছে?
মুর্শিদাবাদের এক তৃণমূল নেতা কড়া সুরে বলেন, “মিম বা আইএসএফ— এইসব দল আসলে বিজেপির সুবিধাই করে দেয়। বাংলার মানুষ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে জিততে দেবে না। AIMIM-এর মতো বাইরের দলের এখানে কোনও জায়গা নেই।”

অন্যদিকে বিজেপি দাবি করছে, তৃণমূলের মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ভেঙে পড়ছে। দলের এক নেতার কথায়, “হিন্দু ভোটাররা অনেক আগেই তৃণমূলকে ছেড়েছে। এখন মুসলিমরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ছাব্বিশের ভোটে তৃণমূলের বিসর্জন নিশ্চিত।”

ওয়াইসির আসন্ন সফর
AIMIM রাজ্য নেতৃত্ব জানিয়েছে, খুব শিগগিরই পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসবেন আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। সংগঠন শক্তিশালী করা এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি তদারকির জন্যই এই সফর। দলীয় সূত্রে খবর, ফুরফুরা শরিফসহ বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর।

সব মিলিয়ে AIMIM-এর এই ঘোষণা রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্কে নতুন জটিলতা তৈরি করেছে। একুশে যদিও তারা কার্যত ব্যর্থ হয়েছিল, তবে এবার ভিন্ন পরিস্থিতিতে আবার ময়দানে নামছে। AIMIM যদি সংখ্যালঘুদের অন্তত কিছু অংশকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়, তবে তৃণমূলের জন্য বড় চিন্তার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে বিজেপি এই ভোট-বিভাজনকেই স্বাগত জানাবে।

অতএব, ২০২৬-এর ভোটের আগে AIMIM-এর আগমন রাজ্য রাজনীতিতে এক নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এবার দেখার, বাংলার মাটিতে ওয়াইসির দল আদৌ জমি পায় কি না।