শিয়ালদহ এবং হাওড়া (Sealdah-Howrah) – এই দুই স্টেশন সর্বদাই যাত্রীদের ভিড়ে গিজগিজ করে। এই ভিড়ের মধ্যেই বহু সময় মহিলারা যৌন নিগ্রহের শিকার হন, কিন্তু অভিযোগ করলেও অপরাধী গা ঢাকা দিয়ে বেরিয়ে যায় সহজেই। এবার সেই চিত্র বদলাতে চলেছে। মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যোগী হয়েছে রেলস্টেশনগুলিতে এআই (Artificial Intelligence) প্রযুক্তিনির্ভর ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম বসানোর।
প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের সাতটি প্রধান রেল স্টেশনে এই প্রযুক্তি বসানো হচ্ছে। তার মধ্যে শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন রয়েছে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে মুখ চিনে দাগি যৌন অপরাধীদের চিহ্নিত করা যাবে নিমেষে।
শিয়ালদহ আরপিএফ-এর সিনিয়র কমান্ড্যান্ট মনোজকুমার সিং জানিয়েছেন, “বর্তমানে শিয়ালদহ স্টেশনে ২৩৯টি পুরনো ক্যামেরা রয়েছে। নতুন করে ৫০০টি এআই ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তিনির্ভর ক্যামেরা বসানো হবে আগামী বছর। হাওড়া স্টেশনেও একই প্রযুক্তির ক্যামেরা বসবে।”
এই ক্যামেরাগুলির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এগুলি কোনও ব্যক্তির মুখমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে সেই তথ্যকে কেন্দ্রীয় ডেটাবেসের সঙ্গে মিলিয়ে দ্রুততার সঙ্গে চিহ্নিত করতে পারবে। ফলে যদি কোনও দাগি যৌন অপরাধী স্টেশনে ঢোকে, তাহলে ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে শনাক্ত করবে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক করবে।
ফেসিয়াল রিকগনিশন ক্যামেরার সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ন্যাশনাল ডেটাবেস অন সেক্সুয়াল অফেন্ডার্স (NDSO)। এখানে বর্তমানে ২০ লক্ষের বেশি যৌন অপরাধীর বায়োমেট্রিক ও ফেসিয়াল তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। ফলে তথ্যের এই বিশাল ভাণ্ডার থেকে মুখের মিল খুঁজে বের করে অনেক দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
পূর্ব রেলের আরপিএফ আইজি অমিয়নন্দন সিনহা জানিয়েছেন, “শুধু শিয়ালদহ বা হাওড়া নয়, মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস, নয়াদিল্লি রেল স্টেশন, এমনকী বিভিন্ন মেলা উপলক্ষে জশিডির মতো জায়গাতেও এই এআই প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি চালু হয়েছে।”
এই প্রকল্পের আওতায় দেশের আটটি মেট্রো শহরে ‘নিরাপদ শহর’ (Safe City) প্রকল্প চালু হয়েছে। যার মাধ্যমে সিসিটিভি, এআই ক্যামেরা এবং ড্রোনের সাহায্যে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালানো হচ্ছে। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই-সহ শহরগুলি এই নজরদারির আওতায়।
আরপিএফ ও জিআরপি সূত্রে খবর, শুধু জাতীয় ডেটাবেস নয়, কলকাতা ও রাজ্যের অভ্যন্তরীণ অপরাধীদের মুখচ্ছবি, অপরাধের ধরন, নাম-ঠিকানা সহ সমস্ত তথ্যও স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হবে, যাতে প্রয়োজনে স্বল্পতম সময়েই ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এই উদ্যোগ শুধুমাত্র নিরাপত্তার প্রশ্নেই নয়, রেলযাত্রী মহিলাদের মধ্যে আস্থা ও সাহস বাড়াবে। কারণ অধিকাংশ সময় অপরাধীরা ধরা না পড়ায় নির্যাতিতা এগিয়ে আসতে ভয় পান। কিন্তু এখন থেকে এমন প্রযুক্তির মাধ্যমে অপরাধের পরে নয়, অপরাধের আগে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাবে।
এআই-ভিত্তিক এই ব্যবস্থা ভারতীয় রেল ব্যবস্থায় নিরাপত্তার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে, যা ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। বিশেষত মহিলাদের যাতায়াতকে আরও নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলাই এর লক্ষ্য।