রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় এবার প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এআই-এর মাধ্যমে ভোটারদের নাম, ছবি, মোবাইল নম্বর, আধার নম্বর এবং বাবা-মায়ের তথ্য স্ক্যান করে ভুয়ো ভোটার ও অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করা হবে।
কমিশন একটি কর্মকর্তা জানালেন, “এআই শুধুমাত্র ডেটা স্ক্যানের একটি প্রযুক্তি। গভীর বিশ্লেষণ করে যে কোনও অসঙ্গতি ধরা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারও বাবার নাম ভুল দেওয়া থাকে বা ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে অসঙ্গতি থাকে, তবে তাঁকে আমরা ডেকে পাঠাব।”
চূড়ান্ত তালিকার আগে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছে ৯৮ হাজার ভুয়ো ভোটার
সূত্রের দাবি, এসআইআর-এর কাজের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই প্রায় ৯৮ হাজার সন্দেহভাজন ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করা হয়েছে। অনুমান, খসড়া তালিকা থেকে ৪৩ লক্ষের বেশি নাম বাদ পড়তে পারে—এতে মৃত, নিখোঁজ বা অন্যত্র চলে যাওয়া ভোটাররাও রয়েছেন। তবে চূড়ান্ত সংখ্যা এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
বিএলওদের উপর চাপ এবং মৃত্যুর ঘটনা
এসআইআর প্রক্রিয়ার জেরে পশ্চিমবঙ্গের বিএলওদের ওপর কাজের চাপ বেড়ে গেছে। সোমবার পর্যন্ত চার জেলায় অন্তত চার জন বিএলও-এর মৃত্যু সংবাদে এসেছে—পূর্ব বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদে হৃৎপিণ্ডের জটিলতা, জলপাইগুড়ি ও নদিয়ায় মৃত্যুর ঘটনা। কমিশন সূত্র বলছে, বিএলওদের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করা হবে।
সময়সীমা সম্প্রসারণ, কাজ এগিয়ে চলছে
এসআইআর-এর দ্বিতীয় দফার সময়সীমা পূর্বে ৪ ডিসেম্বর নির্ধারিত ছিল; তা সম্প্রতি ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কমিশন সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্যে এনুমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজ়েশন অন্যান্য বড় রাজ্যের তুলনায় ভালো হয়েছে। তবে সময়সীমা আরও বাড়ানো হবে না বলেই ধারণা।
শুনানি ও নজরদারি
খসড়া তালিকা প্রকাশের পর ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে অভিযোগ ও আপত্তি জানানোর প্রক্রিয়া। ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য নিযুক্ত ইআরওরা ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুনানি ও যাচাই প্রক্রিয়া পরিচালনা করবেন। কমিশন সূত্র নিশ্চিত করেছে, পুরো শুনানি সিসিটিভি রেকর্ড করা হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর নজর রাখা হবে।
সারসংক্ষেপ
এআই প্রযুক্তির ব্যবহার, বিএলওদের কঠোর কাজ, আন্তর্জাতিক নজরদারি এবং সময়সীমা সম্প্রসারণ—এসব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া এইবার নজরকাড়া গুরুত্ব পাচ্ছে। কমিশন বলছে, “প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা কঠোরভাবে নজর রাখছি।”
