শিয়ালদহ: শিয়ালদহ ডিভিশনে এসি লোকাল ট্রেন (AC Local Trains) চালুর সাফল্যের পর এবার হাওড়া ডিভিশনেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকাল ট্রেন চালুর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। রেল সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই রেল বোর্ডের কাছে দু’টি এসি রেকের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। যাত্রীদের দাবি ও ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে পূর্ব রেল এবার হাওড়া থেকেও এসি লোকাল চালানোর পরিকল্পনা করছে।
১১ আগস্ট পূর্ব ভারতের প্রথম এসি লোকাল ট্রেন চালু হয় শিয়ালদহ–রানাঘাট রুটে। শুরু থেকেই যাত্রীদের বিপুল সাড়া মেলে। আশঙ্কা ছিল, লোকাল ট্রেনে ১০ গুণ বেশি ভাড়া গুনতে চাইবেন না যাত্রীরা। কিন্তু বাস্তবে চিত্রটা সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। প্রতিটি ট্রেনে আসন পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি বহু যাত্রী দাঁড়িয়ে যাত্রা করছেন। এর ফলে রেলের ভেতর থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীমহলে এসি লোকালের গ্রহণযোগ্যতা দ্রুত বেড়ে যায়।
এরপর ৫ সেপ্টেম্বর বনগাঁ–শিয়ালদহ শাখায় দ্বিতীয় এসি লোকাল চালু হয়। এই রুটেও একই ছবি। এমনকি যে সমস্ত স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ায় না, সেখানকার যাত্রীরাও রীতিমতো আন্দোলনে নেমেছেন স্টপেজ আদায়ের দাবিতে। অশোকনগরবাসীর আন্দোলন তার বড় উদাহরণ।
রেল সূত্রে খবর, হাওড়া ডিভিশনের প্রথম এসি লোকাল চালানো হতে পারে হাওড়া–ব্যান্ডেল রুটে। প্রতিদিন এই রুটে কয়েক হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। অফিসযাত্রী থেকে পড়ুয়া—সবারই ভরসা এই লাইনের লোকাল ট্রেন। তাই এসি লোকাল চালু হলে যাত্রীদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।
হুগলি ঘাটের বাসিন্দা তৃষা রায় প্রতিদিন ব্যান্ডেল থেকে হাওড়া আসেন ট্রেনে। শিয়ালদহ ডিভিশনে এসি লোকালের খবর শোনার পর থেকেই হাওড়ার যাত্রীরা অপেক্ষায় ছিলেন। তৃষার কথায়, “শিয়ালদহের যাত্রীরা ঠান্ডা হাওয়া খাচ্ছেন, আমরা কি বঞ্চিত হব নাকি? রেল নিশ্চয়ই আমাদের কথাও ভাববে।”
শ্রীরামপুরের বাসিন্দা মৌমিতা ভৌমিক জানালেন, “এসি রেকগুলিতে প্রতিদিন প্রায় সব আসনই ভরে যাচ্ছে। অনেক যাত্রী দাঁড়িয়েও যাতায়াত করছেন। তাই রেলের আপত্তি থাকার কথা নয়। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা, কবে হাওড়া থেকেও এসি লোকাল ছাড়ে।”
যদিও পূর্ব রেলের ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত জানিয়েছেন, “এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে এই সংক্রান্ত কোনও সরকারি তথ্য নেই। রেল বোর্ডের থেকে অনুমোদন আসলেই জানানো হবে।”
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যাত্রী চাপ এবং আর্থিক দিক থেকে এসি লোকাল ইতিমধ্যেই রেলের জন্য সফল প্রকল্প হয়ে উঠেছে। তাই হাওড়া ডিভিশনে এই পরিষেবা শুরু হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
শিয়ালদহ ডিভিশনের দুই রুটে এসি লোকালের বিপুল জনপ্রিয়তার পর, হাওড়া–ব্যান্ডেল শাখায় এই পরিষেবা চালু হলে পূর্ব রেলের যাত্রী পরিষেবায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে লোকাল ট্রেন যাত্রার সুবিধা উপভোগ করতে যাত্রীরা এখন দিন গুনছেন।