বাংলার (Bengal) মাটিতে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ (Babri Masjid) পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার ঝড় তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক (MLA) হুমায়ুন কবীর (Humayun Kabir)। তিনি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলায় একটি মসজিদ ট্রাস্ট গঠন করে, সেখানে বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণ করতে চান। তার এই উদ্যোগ দেশের মুসলিম সমাজের মধ্যে একটি নতুন আশা ও উত্সাহের জন্ম দিতে পারে, তবে পাশাপাশি এটি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
হুমায়ুন কবীর বলেন, “১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর থেকে মুসলিমদের মধ্যে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা সহজে সেরে উঠেনি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ হলেও, এখনো পর্যন্ত বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এই কারণেই আমি বাংলায়, বিশেষ করে মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি।”
মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ: প্রয়োজনীয়তা ও উদ্যোগ
হুমায়ুন কবীরের মতে, মুর্শিদাবাদ জেলা দেশের সবচেয়ে মুসলিম অধ্যুষিত জেলা। এখানে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশ, যা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অনেক বেশি। তিনি জানান, মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণের জন্য উপযুক্ত স্থান হতে পারে, কারণ এই জেলার মুসলিম জনগণের মধ্যে এটি একটি ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিধায়ক আরও জানান, মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগর বা বেলডাঙার মতো জায়গায় ২ একর বা ৬ বিঘা জমি কিনে বাবরি মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথমত, মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন মাদ্রাসা পরিচালকদের নিয়ে একটি মসজিদ ট্রাস্ট গঠন করা হবে, যেখানে অন্তত ২০০ সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই ট্রাস্টের মাধ্যমে মসজিদ নির্মাণের কাজ পরিচালিত হবে এবং তারপরে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজটি সম্পন্ন করার লক্ষ্য রয়েছে।
সমর্থন ও বিরোধিতার মধ্যে আলোড়ন
এই উদ্যোগটি ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদের মুসলিম সমাজের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এর মাধ্যমে মুসলিম সমাজের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক সমর্থন প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে করছেন। তবে কিছু মানুষ এই উদ্যোগ নিয়ে বিতর্ক তুলেছেন এবং তাদের মতে, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে হুমায়ুন কবীর জানান, তার এই উদ্যোগ সম্পূর্ণ ধর্মীয় উদ্দেশ্যে এবং মুসলিম সমাজের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য।
তিনি বলেন, “বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে দেশের মুসলিম সম্প্রদায়কে একটি ঐতিহাসিক বার্তা দেওয়া হবে এবং তা জাতীয় ঐক্য এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে।”
মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি প্রতীকী পদক্ষেপ
হুমায়ুন কবীরের এই উদ্যোগকে শুধু মুর্শিদাবাদ বা বাংলার মুসলিম সমাজের জন্য নয়, বরং সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা যদি বাংলার মাটিতে এই উদ্যোগের মাধ্যমে পূর্ণতা পায়, তবে তা মুসলিম সমাজের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হবে।
অপরদিকে, হুমায়ুন কবীরের এই উদ্যোগের মাধ্যমে, তিনি চান যে দেশের বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই প্রক্রিয়া সমর্থন করবে এবং একটি ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে এটি তাদের আত্মমর্যাদার পরিচায়ক হয়ে দাঁড়াবে।
মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা ও রাজনীতি
বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণের এই উদ্যোগ শুধু ধর্মীয় পদক্ষেপই নয়, এটি দেশের রাজনৈতিক চিত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে ধর্মীয় বিষয়ের সঙ্গে রাজনীতি গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। এর মধ্যে হুমায়ুন কবীরের এই উদ্যোগ একটি রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে আসতে পারে, যার মাধ্যমে দেশের মুসলিম সমাজকে নতুন করে একত্রিত করা সম্ভব হতে পারে।
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগকে সমর্থন জানানো হলেও, বিরোধী দলগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, এটি রাজনীতি করার একটি নতুন হাতিয়ার হতে পারে। কিছু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এই ধরনের উদ্যোগ সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিতে পারে এবং জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হতে পারে। তবে, হুমায়ুন কবীর দৃঢ়ভাবে জানান, তার এই উদ্যোগ শুধুমাত্র মুসলিমদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণের ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং চ্যালেঞ্জ
এখনই বলা যাচ্ছে না যে, হুমায়ুন কবীরের এই উদ্যোগ কতটুকু সফল হবে। তবে, তিনি নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে অটল রয়েছেন। তার মতে, এটা কেবল মুর্শিদাবাদ বা বাংলার মুসলিমদের জন্য নয়, এটি দেশের মুসলিমদের জন্য একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হতে চলেছে। তবে, এই পথে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। রাজনৈতিক চাপ, সমাজের প্রতিক্রিয়া, আর্থিক সহায়তা এবং প্রশাসনিক সহযোগিতা—এসব বিষয় তাকে মোকাবিলা করতে হবে।
মুর্শিদাবাদের মুসলিম সমাজ, তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে হুমায়ুন কবীর যদি তার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন, তবে এটি বাংলার মুসলিম সমাজের জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে উঠবে।