অভিষেকের পর এবার ২৫৬ র মাপকাঠি বেঁধে দিলেন কুনাল ঘোষ

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) মুখপাত্র কুনাল ঘোষ (Kunal-Ghosh)একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে বলেছেন…

Kunal-Ghosh for 2026 election

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) মুখপাত্র কুনাল ঘোষ (Kunal-Ghosh)একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে বলেছেন যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন ৫০-এর নীচে থাকবে। তৃণমূল কংগ্রেস ২৫৬টির বেশি আসন জিতবে।”

Advertisements

এই বক্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে তৃণমূল তার আধিপত্য ধরে রাখতে এবং বিজেপির উত্থানকে প্রতিহত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

   

অভিষেকের ভবিষ্যদ্বাণী ও কুনালের সমর্থন

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গত ২৫ জুন ডায়মন্ড হারবারে এক জনসভায় বলেছিলেন, “বিজেপি ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে ৫০টিরও কম আসন পাবে।” তিনি আরও দাবি করেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার শীঘ্রই পতনের মুখে পড়বে।

কুনাল ঘোষ (Kunal-Ghosh) এই ভবিষ্যদ্বাণীকে সমর্থন করে বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেকের নেতৃত্বে দল ইতিমধ্যেই ২০২৬-এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। তিনি জানান, দলের লক্ষ্য ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২৫৬টির বেশি আসন জয় করা, যা তৃণমূলের ঐতিহাসিক বিজয়কে আরও শক্তিশালী করবে।

তৃণমূলের কৌশল ও সাংগঠনিক পুনর্গঠন (Kunal-Ghosh)

২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৪২টি আসনের মধ্যে ২৯টিতে জয়ী হয়, যেখানে বিজেপির আসন ১৮ থেকে ১২-তে নেমে আসে। এই সাফল্য তৃণমূলকে ২০২৬-এর জন্য আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের জেলা সভাপতিদের পুনর্গঠন এবং প্রার্থী নির্বাচনে কঠোর মূল্যায়নের প্রস্তাব দিয়েছেন।

তিনি (Kunal-Ghosh) বলেন, “এবার দলের প্রতি আনুগত্যের চেয়ে পারফরম্যান্স এবং তরুণ ও সৎ নেতাদের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।” কুনাল ঘোষ জানান, দলের ত্রুটিগুলো সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা ২৫০টির বেশি আসন জয়ের লক্ষ্যে সহায়ক হবে।

বিজেপির সমালোচনা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

কুনাল ঘোষ (Kunal-Ghosh)এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। অভিষেক অভিযোগ করেন, বিজেপি বাংলার সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধ করে রাজ্যের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, “বিজেপি মহিলাদের জন্য ৩,০০০ টাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু তাদের শাসিত কোনো রাজ্যে ১,৫০০ টাকাও দেয়নি।

আমাদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে ২.২ কোটি মহিলা উপকৃত হচ্ছেন।” কুনাল ঘোষও বিজেপির বিরুদ্ধে “বাংলা-বিরোধী” মনোভাবের অভিযোগ তুলেছেন, উল্লেখ করে যে রাজ্যের জনগণ তৃণমূলের উন্নয়নমূলক কাজের প্রতি আস্থা রেখেছে।

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ২১৩টি আসন জিতেছিল, যেখানে বিজেপি ৭৭টি আসন পেয়েছিল। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সাফল্য এবং বিজেপির পশ্চাদপসরণ দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। তবে, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, তৃণমূলের দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের অভিযোগ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, যা ২০২৬-এ তাদের পক্ষে যাবে।

চ্যালেঞ্জ ও বিতর্ক

তৃণমূলের এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যের পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা এবং দুর্নীতির অভিযোগে দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুনাল ঘোষ (Kunal-Ghosh) দাবি করেন, এই প্রতিবাদগুলোর প্রভাব ভোটারদের উপর পড়েনি, যেমনটি ২০২৪-এর ছয়টি বিধানসভা উপনির্বাচনে দেখা গেছে। তবে, বিজেপি অভিযোগ করেছে, তৃণমূলের “সংখ্যালঘু তোষণ” নীতি এবং সীমান্তে অনুপ্রবেশ নিয়ে মমতার নীরবতা হিন্দু ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, “নির্বাচন কমিশন বিজেপির হাতে রয়েছে।” তিনি ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগও তুলেছেন। অভিষেক এই বিষয়ে বলেন, তৃণমূল জনগণের কাছে বিজেপির “মিথ্যা প্রচার” প্রকাশ করে দিয়েছে, যেমনটি তারা দিল্লির নির্বাচনে এএপি-র বিরুদ্ধে বিজেপির প্রচারের ক্ষেত্রে দেখিয়েছে।

ভোটার লিস্টের ডিক্লারেশন ফর্ম নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র ক্ষোভ, নিশানায় নির্বাচন কমিশন

তৃণমূলের প্রস্তুতি

তৃণমূল ইতিমধ্যেই ২০২৬-এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। অভিষেক (Kunal-Ghosh) ডিসেম্বরে দলের পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছেন, যেখানে স্থানীয় এবং সৎ নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। ২০২৪-এর উপনির্বাচনে তৃণমূল ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে জয়ী হয়, যা দলের জনপ্রিয়তার ইঙ্গিত দেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “২০২৬-এ খেলা আবার হবে। আমরা একাই লড়ব এবং জিতব।”

কুনাল ঘোষ (Kunal-Ghosh) এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য তৃণমূলের ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে আধিপত্য ধরে রাখার দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করে। ২৫৬টির বেশি আসন জয়ের লক্ষ্য এবং বিজেপিকে ৫০-এর নীচে সীমাবদ্ধ রাখার দাবি দলের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন।

তবে, দুর্নীতির অভিযোগ, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক তৃণমূলের পথে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আগামী নির্বাচন বাংলার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।