রাজীব গান্ধীর পর নরেন্দ্র মোদী, ৪ দশক পর আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রী

PM Modi Alipurduar visit: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে আলিপুরদুয়ারে। প্রায় চার দশক পরে আবার কোনও প্রধানমন্ত্রী এই ছোট শহরের মাটিতে পা রাখতে চলেছেন। ১৯৮৬ সালে…

PM Modi Alipurduar visit

PM Modi Alipurduar visit: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে আলিপুরদুয়ারে। প্রায় চার দশক পরে আবার কোনও প্রধানমন্ত্রী এই ছোট শহরের মাটিতে পা রাখতে চলেছেন। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এসেছিলেন আলিপুরদুয়ারে। ৩৯ বছর পর ২০২৫ সালের ২৯ মে, সেই একই মাটিতে পা রাখতে চলেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্বাভাবিকভাবেই শহরের বাতাসে উৎসবের আমেজ, উত্তেজনা ও রাজনৈতিক আলোচনার ঝড়।

প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে বদলে গেছে চিরচেনা আলিপুরদুয়ারের চিত্র। শহরের প্রধান রাস্তাগুলি মোদীর বিশাল কাটআউট, ব্যানার, হোর্ডিং ও ফেস্টুনে ঢাকা পড়েছে। স্থানীয় প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে শুরু করে শহরের প্রতিটি কোণ ঘিরে ব্যস্ত পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তারা। মোদীর সফর উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। চেকপোস্ট, ব্যারিকেড, নজরদারি ক্যামেরা – সবকিছুরই তৎপরতা বেড়েছে।

   

প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেও এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে নিজের সফর নিয়ে লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গবাসীর সঙ্গে সময় কাটানো সব সময়ই আনন্দদায়ক। আগামীকাল আলিপুরদুয়ারে এক অনুষ্ঠানে আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলায় সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন (CGD) প্রকল্পের শিলান্যাস করব। এই প্রকল্প বহু পরিবারকে উপকৃত করবে, পরিবেশ রক্ষা করবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।”

এই ঘোষণার পর মানুষের প্রত্যাশা ও উন্মাদনা আরও বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে উত্তরবঙ্গবাসী একাধিক পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানিয়ে এসেছে। সিটি গ্যাস প্রকল্প সেই দিক থেকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রাজনৈতিক বার্তা নাকি নির্বাচনী ঘুঁটি?
এই সফর শুধুই কি সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধনে সীমাবদ্ধ? রাজনৈতিক মহল তা মনে করছে না। ২০২৬ সালের শুরুতেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে বিজেপি’র জন্য একটি বড় মঞ্চ হিসেবে দেখছে সবাই। অনেকেই বলছেন, আলিপুরদুয়ারের মাটি থেকেই মোদী বাংলার নির্বাচনী দামামা বাজিয়ে দিতে পারেন।

Advertisements

বিজেপি নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই দাবি করেছে, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত হবে। উত্তরবঙ্গ traditionally বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, তাই এই সফরকে ঘিরে দলীয় কৌশলও জোরদার হয়েছে।

তৃণমূলের কটাক্ষ
তবে এই সফর ঘিরে রাজনৈতিক তরজাও কম হচ্ছে না। তৃণমূল কংগ্রেস প্রশ্ন তুলছে, এই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরের উদ্দেশ্য কতটা প্রশাসনিক, আর কতটা রাজনৈতিক? মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কটাক্ষ করে বলেন, “মোদীজি আলিপুরদুয়ারে খালি হাতে আসছেন। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর রাজনৈতিক বিষ ছড়াতে আসছেন। মানুষ জানে, কাজ করেছে তৃণমূল, প্রচার করছে বিজেপি।”

অপারেশন সিঁদুরের পর পূর্ব ভারতে মোদী
বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই সফরের একটি দিক – অপারেশন সিঁদুরের পর এটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম পূর্ব ভারত সফর। সেই প্রেক্ষাপটে জাতীয় নিরাপত্তার বার্তা এবং সেনার প্রতি সম্মান জানানোর বার্তাও এই সফরে জোরালো হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আলিপুরদুয়ারে মোদীর এই সফর নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। ৪০ বছরের ব্যবধানে কোনও প্রধানমন্ত্রীর পদচারণাই শহরকে জাতীয় রাজনীতির মানচিত্রে ফের একবার কেন্দ্রে তুলে এনেছে। উন্নয়নের আশ্বাস, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং রাজনৈতিক তরজা – সব মিলিয়ে মোদীর সফর আলিপুরদুয়ারকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি করেছে নতুন মাত্রায়। এখন দেখার, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কতটা প্রশাসনিক বার্তা থাকে, আর কতটা রাজনৈতিক আগুন ছড়ায় – উত্তর দেবে ২৯ মে’র জনসভা।