১০ বছরের লড়াই শেষে ঘরে ফেরা, সমাজের কাছে প্রশ্ন সান্ত্বনার— ‘আমার অপরাধ কী ছিল?’

মিলন পণ্ডা, কাঁথি: এক দশক। দশটি বছর ঘরছাড়া, অপমান, অত্যাচার আর অবহেলার মধ্যে কাটিয়েছেন কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের বলভদ্রপুরের বাসিন্দা সান্ত্বনা জানা (Santwana Jana)। ৫৫ বছরের…

মিলন পণ্ডা, কাঁথি: এক দশক। দশটি বছর ঘরছাড়া, অপমান, অত্যাচার আর অবহেলার মধ্যে কাটিয়েছেন কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের বলভদ্রপুরের বাসিন্দা সান্ত্বনা জানা (Santwana Jana)। ৫৫ বছরের এই মহিলা যাঁর একসময় পৈতৃক সূত্রে কোটি টাকার সম্পত্তি ছিল, তিনিই হয়ে উঠেছিলেন ‘ঘরহীন’। অবশেষে প্রশাসনের সহায়তায় নতুন পাকা বাড়িতে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেন তিনি। কিন্তু সেই আনন্দের মুহূর্তেও তাঁর গলা কাঁপছে এক প্রশ্নে— “আমার অপরাধ কী ছিল?”

সান্ত্বনার জীবন যেন রূপকথার এক নির্মম অধ্যায়। বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি রক্ষা করতেই শুরু হয় তাঁর লড়াই। স্থানীয় শাসকদলের একাংশ সেই সম্পত্তি দখলের চক্রান্ত করে। শুরু হয় হুমকি, শারীরিক নিগ্রহ, এবং চরিত্রহননের চেষ্টা। তাঁকে ‘পাগল’ বলে প্রচার করে গ্রামছাড়া করা হয়। একাধিকবার তাঁকে মারধর করা হয়েছে। অথচ এই সময় প্রশাসনের কাছ থেকে তেমন কোনও সাহায্য মেলেনি।

   

তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন কখনও কাঁথির শাসক দপ্তরের বারান্দায়, কখনও কাঁথি থানার করিডরে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর, রাজ্য প্রশাসনের একাধিক স্তরে চিঠি লিখেছেন, দরজায় দরজায় গিয়েছেন। সেই সময় সান্ত্বনার পায়ের জুতো ক্ষয় হয়েছে, কিন্তু মেলেনি আশ্রয়।

তবে, সব ব্যর্থতার মাঝেও দেখা মিলেছে আশার আলো। পূর্ব মেদিনীপুরের বর্তমান জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি এবং কাঁথি থানার আইসি প্রদীপকুমার দাঁ-এর মানবিক হস্তক্ষেপে শুরু হয় সান্ত্বনার নতুন জীবনের পথচলা। প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে তাঁর জন্য নির্মিত হয়েছে একটি নতুন পাকা বাড়ি। সম্প্রতি সেই বাড়ির গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠানে কাঁথি থানার টাউন অফিসার প্রনব বেরা’র তত্ত্বাবধানে আয়োজন করা হয় মধ্যাহ্নভোজ, যেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ২০০ জন।

গৃহপ্রবেশের দিন সান্ত্বনা দেবীর চোখে জল ছিল, কিন্তু সে ছিল স্বস্তির আনন্দের অশ্রু। দীর্ঘদিন পর নিজের মাথার উপর একটি ছাদ পেয়ে যেন নতুন করে বাঁচার সাহস পেলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “একটা প্রশ্ন আমার সারা জীবনের, আমি কী ভুল করেছিলাম? কেন এতটা সহ্য করতে হল?”

Advertisements

এই প্রশ্ন কেবল সান্ত্বনার নয়, সমাজের সেই সব নিপীড়িত মানুষের যাঁরা ক্ষমতার দাপটে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। তবে সান্ত্বনার এই ফিরে আসা যেন প্রমাণ করে দেয়, প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে পরিবর্তন সম্ভব।

তবে সব সমস্যার সমাধান এখনও হয়নি। নতুন বাড়িতে এখনো নেই পানীয় জলের সুবিধা। কাঁথি থানার আইসি প্রদীপকুমার দাঁ আশ্বাস দিয়েছেন, খুব দ্রুত সেই সমস্যারও সমাধান হবে।

সান্ত্বনা জানার এই দীর্ঘ লড়াই শুধুমাত্র একজন নারীর ব্যক্তিগত সংগ্রাম নয়, এটি একটি সামাজিক প্রতিবাদ— যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো যায়, এবং সঠিক নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক সদিচ্ছা থাকলে সেই প্রতিবাদ জয়ীও হতে পারে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News