লোকসভা থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজধর্ম পালনে কড়া প্রশাসক মমতা

লোকসভা ভোটের ফলেই স্পষ্ট যে, শহর এলাকায় নড়বড়ে হয়েছে তৃণমূলের সমর্থন। কলকাতার ৪৭টি ওয়ার্ডে এগিয়ে বিজেপি। রাজ্যের অন্যান্য পুরনিগম ও পুরসভার বেশ কয়েকটি পদ্ম বাহিনীর…

Administrator Mamata Banerjee is busy practicing Rajdharma after learning from Lok Sabha result, কড়া প্রশাসক মমতা ব্যানার্জী

লোকসভা ভোটের ফলেই স্পষ্ট যে, শহর এলাকায় নড়বড়ে হয়েছে তৃণমূলের সমর্থন। কলকাতার ৪৭টি ওয়ার্ডে এগিয়ে বিজেপি। রাজ্যের অন্যান্য পুরনিগম ও পুরসভার বেশ কয়েকটি পদ্ম বাহিনীর বাড়বাড়ন্ত। বছর দু’য়েকের মধ্যে বিধানসভা ভোট। অবস্থার বদলে তাই মরিয়া মুখ্যমন্ত্রী। নেত্রীর খোলস ছেড়ে মমতা এখন জোর দিচ্ছেন প্রশাসনের হাল ধরতে। লোকসভা ভোটের পর সরকারের প্রসাসনিক কয়েকটি সিদ্ধান্তেই তা পরিস্কার।

উত্তরের শিলিগুড়ি থেকে রাজধানী কলকাতা- পুরনিগমগুলির অন্যতম সমস্যা হকার-রাজ। রাজ্যজুড়ে সরকারি জমি বেদখল হচ্ছে। তিতিবিরক্ত শহরবাসী। কিন্তু এতদিন প্রশাসনের তেমন নজর ছিল না। যার প্রভাব পড়েছে তৃণমূলের ভোটবাক্সে। বিষয়টি বুঝেই চলতি মাসেই নবান্নে বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী।

   

দলীয় কাউন্সিলর-পুলিশদের মমতা বার্তা, ‘লোভ সংবরণ করুন’

ভোটের আবহেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাজ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মমতা। গত ২১ জুনের বৈঠকেও এই দফতরকে কাঠগড়ায় তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় রাজ্য সরকারের একশ্রেণির আমলা এবং পুলিশ কর্তাদের। বেদখল সরকারি জমি পুনরুদ্ধারে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির সদস্য কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, অর্থ সচিব মনোজ পন্থ, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ বর্মা এবং আইএএস অফিসার প্রভাত মিশ্র।

এরপর গত ২৪ জনের বৈঠকেও অ্যাকশনের বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা, সল্টলেক, রাজারহাট সহ রাজ্যের পুর অঞ্চলেগুলোয় বেআইনি হকারদের সরাতে কড়া বার্তা দেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। তারপরই কলকাতা সহ সর্বত্র শুরু হয় হকার উচ্ছেদ অভিযান। এমনকী চলে বুলডোজারও। হাহাকার পড়ে যায় হকারদের মধ্যে। যা নিয়ে সরগরম হয় রাজ্য রাজনীতি। বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্ব কাঠগড়ায় তোলে মমতা প্রশাসনকে। কেন আগাম নোটিস না দিয়ে এই বলপ্রয়োগ তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।

মমতার নির্দেশে ‘দখলমুক্তি’, ছোট ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ রুখে নায়ক বাম কাউন্সিলর

বিষয়টি সার্বিকভাবে জনমনে ভাল প্রভাব ফেলছে না বুঝতে পারেন বঙ্গ রাজনীতিতে পোড়খাওয়া নেত্রী মমতা। ফলে বুধবারই নবান্নে পের বৈোটক ডাকেন তিনি। সব পুরসভার মেয়র, জেলা শাসক ও পুলিশ কর্তাদের নিয়ে এ দিন বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠক থেকেই বেআইনি হকার উচ্ছেদ নিয়ে কড়া বার্তা দেন তিনি। বলে দেন, সরকার নির্দিষ্ট জায়গাতেই বসবে হকাররা। তবে ফুটপাতের পুরোটা বা রাস্তা দখল করে কোনওভাবেই দোকান বসানো যাবে না।

হকারদের এ হেন দাপটের জন্য নিজের দলের কাউন্সিলর নেতা ও পুলিশকেও দায়ী করেছেন প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, ‘আমি পরিষ্কার বলে দিচ্ছি হকারদের থেকে কেউ চাঁদা নেবে না। পুলিশও নেবে না। স্থানীয় নেতাও নেবে না।’ তাঁর সংযোজন, ‘আগে টাকা নিয়ে রাস্তায় হকার বসাবে। তার পর বুলডোজার দিয়ে তুলে দেবে। এ আমার নীতি নয়। হকারদের জীবন ও জীবিকার জন্য রাজ্যে আইন রয়েছে। ১০৪৫টি ন্যাচারাল মার্কেট। ৪৭৮৭ হেরিটেজ মার্কেট চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজ্যের ১২৮টি আর্বান লোকাল বডি এলাকায় হকার ভেন্ডিং কমিটি তৈরির কথা বলা হয়েছে। এবার সেই কমিটিকে নজর রাখতে হবে।’

রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য সুখবর, নবান্নের ঘোষণায় আনন্দের জোয়ার

প্রতিটি হকার জোনে একটি করে বাড়ি চিহ্নিত করার জন্য কলকাতা মেয়রকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাস্তায় গোডাউন বানানোরের বদলে সেই বাড়িতে হকাররা তাঁদের মালপত্র রাখবেন। দোকান বানাতে প্লাস্টিকও ব্যবহার করা যাবে না। হকারদের একই রকমের মেটেরিয়াল দিয়ে দোকান বানাতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

পুরো ব্যবস্থা কার্যকর করতে একমাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন মমতা। এই সময়কালে হকার উচ্ছেদ হবে না বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অর্থাৎ, একদিকে কড়া প্রশাসনিক নির্দেশ, অন্যদিকে সরকারের মানবিক মুখ তুলে আনার চেষ্টায় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।