ভোটের আগে পরিযায়ী দরদ নিয়ে মমতাকে নিশানা অধীরের

পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী (Adhir) আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ তুলে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের…

Bengal Election 2026, Mamata Banerjee, Adhir Ranjan Chowdhury, Migrant Workers,

পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী (Adhir) আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ তুলে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের ইস্যুতে মমতার সাম্প্রতিক প্রতিবাদ ও বক্তব্যকে ‘ভোটের নাটক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে অধীর প্রশ্ন তুলেছেন।

তিনি বলেছেন এতদিন পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি মমতার দরদ কোথায় ছিল? তিনি উল্লেখ করেছেন, কোভিড মহামারীর সময় মমতা নিজেই ‘করোনা এক্সপ্রেস’ নামে পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেন রাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। এখন, আসন্ন নির্বাচনের আগে তিনি পরিযায়ী শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলছেন, যা অধীরের মতে, কেবল রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের কৌশল।

   

সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অধীর বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা বলছেন, কিন্তু কোভিডের সময় তিনিই বলেছিলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেন বাংলায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। তখন এই মানুষদের কষ্টের কথা তাঁর মনে পড়েনি। এখন ভোটের বাজার গরম হওয়ায় পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা মনে পড়েছে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, রাজ্যে চাকরির অভাবের কারণেই বাংলার যুবক-যুবতীরা ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁর মতে, “বাংলার ছেলে-মেয়েরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাইরে যেতেই পারেন, কিন্তু কাজের অভাবে আজ লক্ষ লক্ষ মানুষ গুজরাত, মহারাষ্ট্র, দিল্লির মতো রাজ্যে রোজগারের জন্য পড়ে আছেন।”

অধীরের এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিযায়ী শ্রমিকদের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। গত ১৬ জুলাই কলকাতায় তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়, যেখানে মমতা ও তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। এই মিছিলে মমতা বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি শ্রমিকদের উপর হেনস্থার অভিযোগ তুলে সরব হন। তিনি বলেন, “বাংলা ভাষা বললেই কাউকে বাংলাদেশি বলা হচ্ছে।

আমাদের ছেলে-মেয়েদের জল, বিদ্যুৎ বন্ধ করে উচ্ছেদের চেষ্টা চলছে। এটা আমরা মেনে নেব না।” তবে, এই মিছিলে মমতার হিন্দিতে বক্তৃতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অধীর এই প্রসঙ্গে বলেন, “বাঙালির জন্য লড়াইয়ে হিন্দি বক্তৃতা কেন? এটা কি বাঙালি পরিচয়ের প্রতি অপমান নয়?”

অধীরের অভিযোগ, মমতার এই সাম্প্রতিক উদ্যোগ কেবল আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য। তিনি বলেন, “তৃণমূল সরকারের ১৪ বছরের শাসনে রাজ্যে শিল্পায়ন হয়নি, চাকরির সুযোগ তৈরি হয়নি। ফলে, বাংলার যুবক-যুবতীদের ভিন রাজ্যে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করতে হচ্ছে।

এখন ভোটের আগে তাঁদের পক্ষে কথা বলে মমতা নিজের ভাবমূর্তি গড়তে চাইছেন।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, কোভিড মহামারীর সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালিয়েছিল, কিন্তু তৃণমূল সরকার তখন তাদের ফিরতে বাধা দিয়েছিল।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অধীরের এই অভিযোগ তৃণমূলের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বিশ্লেষক সুজিত ঘোষ বলেন, “পরিযায়ী শ্রমিকদের ইস্যু বাংলার রাজনীতিতে সবসময়ই স্পর্শকাতর।

Advertisements

অধীর এই ইস্যুতে মমতার পুরনো বক্তব্য তুলে ধরে তাঁর নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এটা তৃণমূলের ভাবমূর্তির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।” তবে, তিনি এও বলেন, “মমতার সাম্প্রতিক প্রতিবাদ মিছিল জাতীয় স্তরে বাঙালি হেনস্থার ইস্যুকে তুলে ধরার একটি কৌশল হতে পারে।”

তৃণমূল কংগ্রেস অধীরের অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, “অধীর চৌধুরী মিথ্যা অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছেন। কোভিডের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বাস, খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। আজ তিনি বাঙালি শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার জন্য লড়ছেন।”

তৃণমূলের দাবি, রাজ্যে চাকরির সুযোগ তৈরির জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে, এবং দেউচা পাঁচামি কয়লা খনি প্রকল্পের মতো উদ্যোগে লক্ষাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।সামাজিক মাধ্যমে এই ইস্যু নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “অধীর চৌধুরী ঠিকই বলেছেন।

মমতা দিদি কোভিডের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে ছিলেন না, এখন ভোটের জন্য নাটক করছেন।” আরেকজন লিখেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালির গর্ব। তিনি বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, এটা প্রশংসনীয়।”

দূষিত তালিকায় দেশের সেরা দশে নেই বাংলার কোনও শহর

এই বিতর্ক আগামী দিনে রাজ্যের রাজনীতিতে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সবার নজর রয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ইস্যু বাংলার রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে, এবং এই ইস্যুতে তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে তীব্র সংঘাতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।