ডানা ছাঁটল উত্তর কলকাতার সাংসদের? লোকসভার নেতৃত্বে বড় মুখ

Abhishek new leader of loksabha

অতীত সুদীপ জমানা, এবার লোকসভার দায়িত্বে নতুন নেতৃত্ব।লোকসভায় সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের (Abhishek) নতুন দলনেতা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ববর্তী লোকসভা দলনেতা সুদীপ বন্দোপাধ্যায়ের জায়গায় অভিষেকের এই নিয়োগকে তৃণমূল কংগ্রেসের কৌশলগত পরিবর্তন এবং জাতীয় রাজনীতিতে দলের প্রভাব বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Advertisements

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি দলের প্রতিষ্ঠাতা এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতুষ্পুত্র, দীর্ঘদিন ধরে দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। তাঁর এই নতুন ভূমিকা দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অভিষেকের রাজনৈতিক যাত্রা

২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দ্রুত দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে উঠেছেন। তিনি ২০১১ সালে সর্বভারতীয় তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি নির্বাচিত হন, যা তাঁকে দলের যুব আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ২০১৪ সালে তিনি ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন, সিপিআই(এম)-এর প্রার্থীকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে।

তখন তিনি ছিলেন লোকসভার সর্বকনিষ্ঠ সাংসদ। ২০১৯ সালে তিনি একই কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থীকে ৩,২০,৫৯৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ২০২৪ সালে তিনি তৃতীয়বারের জন্য ডায়মন্ড হারবার থেকে নির্বাচিত হন, ৭,১০,৯৩০ ভোট পেয়ে নতুন রেকর্ড গড়েন।

২০২১ সালের ৫ জুন অভিষেককে তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়, যা তাঁর দলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়। তিনি ২০২৩ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) জোটের সমন্বয় কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন, যা জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকাকে আরও বিস্তৃত করে।

লোকসভায় নতুন দায়িত্ব

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা হিসেবে নিয়োগ দলের পূর্ববর্তী দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ইঙ্গিত। এই পরিবর্তন দলের ভিতরে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের উত্থান এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরাধিকার পরিকল্পনার একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তৃণমূলের সিনিয়র নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিষেক দলে দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা। এতে কোনো বিতর্ক নেই।” তবে, মুখ্যমন্ত্রী পদে উত্তরাধিকারের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি দলের চেয়ারপারসন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে।

অভিষেকের এই নিয়োগ তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় রাজনীতিতে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের ইঙ্গিত দেয়। তিনি ইতিমধ্যেই লোকসভায় বাজেট আলোচনার সময় কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ২০২৪ সালের বাজেট আলোচনায় তিনি কৃষি আইন এবং কেন্দ্রীয় তহবিল বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন, যা লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার সঙ্গে তাঁর তীক্ষ্ণ বাদানুবাদের কারণ হয়।

Advertisements

দলের কৌশলগত পরিবর্তন

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দলের আসন সংখ্যা ৩৪ থেকে ২২-এ নেমে আসার পর, অভিষেক দলের ইমেজ উন্নত করতে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বার্তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তিনি নির্বাচনী কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে কাজ করেন এবং দলের যুব ও শ্রমিক শাখায় নতুন নেতৃত্ব নিয়োগ করেন। ২০২৩ সালে তাঁর ‘নব জোয়ার যাত্রা’ দলের যুব সমর্থকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং গ্রামীণ নির্বাচনে দলের পারফরম্যান্স উন্নত করতে সহায়ক হয়েছিল।

সংসদ থেকে সেলে! কারাগারে কী খাবেন দেবগৌড়ার এমপি নাতি? রোজগারই বা কত?

রাজনৈতিক প্রভাব

অভিষেকের এই নিয়োগ তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বাড়ানোর একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি ইতিমধ্যেই ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর জন্য সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলে তৃণমূলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, যা ভারতের বৈশ্বিক সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করেছে। তাঁর উপস্থিতি বাংলার সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানকে জোরালো করেছে।

তবে, এই নিয়োগ নিয়ে দলের মধ্যে কিছু বিতর্কও দেখা দিয়েছে। বিজেপির রাজ্য নেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন যে তৃণমূলে “একটিই পদ, বাকিরা ল্যাম্পপোস্ট।” তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়ারপারসন এবং অভিষেক ম্যানেজার, বাকিরা গুরুত্বহীন।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা হিসেবে নিয়োগ দলের নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের উত্থান এবং জাতীয় রাজনীতিতে আরও সক্রিয় ভূমিকার ইঙ্গিত দেয়। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্ব, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং জনসংযোগ তৃণমূল কংগ্রেসকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।

তবে, তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জও কম নয়, বিশেষ করে বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং দলের অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা। অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূল কীভাবে জাতীয় রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে, তা আগামী দিনে লক্ষণীয় হবে।