রাজনীতির কর্মব্যস্ত দিনশেষে এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। দুপুরে ৪ কিমি হেঁটে তৃণমূলের মিছিলে অংশগ্রহণ, মিছিল শেষে জনসভায় বক্তৃতা, আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই শহরের তরুণ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে এক প্রাণবন্ত আলাপচারিতা, সব মিলিয়ে মঙ্গলবার ছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিপূর্ণ রাজনৈতিক দিনপঞ্জি।
‘পুশআপ চ্যালেঞ্জে’
কিন্তু সেখানেই ঘটল চমক। ওই উদ্যোক্তা-আলোচনায় অভিষেক অংশ নিলেন এক ‘পুশআপ চ্যালেঞ্জে’— এবং একে একে ৩০-এরও বেশি পুশআপ দিয়ে তাক লাগালেন উপস্থিত সবাইকে। দর্শকাসনে হাততালির ঝড়, কেউ কেউ বিস্ময়ে মোবাইল তুললেন মুহূর্তটি বন্দি করতে।
রাজনৈতিক সভা থেকে ফিটনেস প্রদর্শন, এই পরিবর্তনের ছবি যেন আরও একবার স্পষ্ট করে দিল, ফিটনেস এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মিছিল, বক্তৃতা, তারপর ফিটনেস শো
মঙ্গলবার ছিল তৃণমূলের বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) কর্মসূচি-বিরোধী মিছিল। ধর্মতলা থেকে জোড়াসাঁকো পর্যন্ত প্রায় ৪ কিমি হেঁটে নেতৃত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষপর্যন্ত কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্যও রাখেন তিনি— সেই সভাতেই দিল্লি যাওয়ার প্রস্তুতির কথাও জানান।
এরপর শহরের উঠতি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বিশেষ আলোচনাসভায় অংশ নিতে পৌঁছন তিনি। সেখানেই ফিটনেস চ্যালেঞ্জের মুহূর্ত। অন্যরা যখন ১০ বা ২০ পুশআপের পর থেমে যাচ্ছেন, তখন অভিষেক থামলেন ৩০-এর ওপরে গিয়ে।
নতুন রাজনৈতিক ট্রেন্ডের ইঙ্গিত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, অভিষেকের এই উদ্যোগ আসলে বঙ্গ রাজনীতিতে এক নতুন ধারা আনছে— যেখানে নেতাদের মধ্যে কেবল মানসিক বা সাংগঠনিক নয়, শারীরিক ফিটনেসও হয়ে উঠছে প্রতিযোগিতার অংশ।
একজন তরুণ নেতা হিসেবে অভিষেকের এই উপস্থিতি তরুণ প্রজন্মের কাছেও অনুপ্রেরণার, রাজনীতির সঙ্গে শারীরিক সচেতনতা মিলিয়ে এক নতুন ভারসাম্যের বার্তা দিচ্ছে।
১০ বছর আগের অভিষেক, এখনকার রূপান্তর
এক দশক আগে এই রূপে দেখা যেত না অভিষেককে। ওজন ছিল বেশি, শরীরে মেদের ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই ছবিটা আমূল বদলে ফেলেছেন তিনি। নিয়মিত জিমে যান, স্বাস্থ্য সচেতন খাবার অনুসরণ করেন, এবং ফিটনেস সংক্রান্ত মুহূর্ত প্রায়ই ভাগ করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ফিটনেসে এগিয়ে মুখ্যমন্ত্রীও
এই ক্ষেত্রে তিনিও পিছিয়ে নেই তাঁর পিসি, তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। প্রতিদিন সকালে হাঁটা, যোগাভ্যাস ও অনুশীলনের অভ্যাস এখনও অবিচল তাঁর জীবনে। সেই ধারা যেন নিজের প্রজন্মে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অভিষেক।
রাজনীতির ভিড়ভাট্টায় যেখানে ক্লান্তি আর চাপ নিত্যসঙ্গী, সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই শারীরিক সক্ষমতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ যেন এক নতুন বার্তা, “রাজনীতি নয় শুধু, নেতৃত্বের জন্যও ফিট থাকা জরুরি।”


