প্রতি বছরের মতো এই বছরও ২১ জুলাই পশ্চিমবঙ্গে শহীদ দিবস পালিত হচ্ছে (Abhishek Banerjee)। ১৯৯৩ সালের এই দিনে তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের গুলিতে ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই ঘটনার স্মৃতি ধরে রাখতে এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর ধর্মতলায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে।
এই বছরও শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা-বিরোধী শক্তি, বিশেষ করে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, “বাংলা-বিরোধীদের বাংলায় কোনো জায়গা দেব না। বিজেপিকে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাব।যত দিন যাবে, মায়ের ভোগে যাবে।”
ধর্মতলার শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে বাংলাকে আর্থিকভাবে বঞ্চিত করছে। তিনি বলেন, “বিজেপি বাংলার বকেয়া টাকা দেয় না। তারা বাংলাকে বঞ্চিত করছে। তিনি বাংলার বাইরে বাঙালিদের নিগ্রহের ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরে বলেন এই বাংলা বিরোধী দলকে কোনোদিন বাংলায় আনবেন না।
তৃণমূল কংগ্রেস কখনোই রাজ্যের কোনো প্রকল্প বন্ধ করেনি, কিন্তু বিজেপি বাংলার উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। এদের শূন্য করে ছাড়তে হবে।” অভিষেকের এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির বাংলা-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তিনি দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “বাংলার মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।
যারা বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি ও অধিকারের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের বাংলায় কোনো জায়গা দেওয়া হবে না।”২১ জুলাই শহীদ দিবস বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যুব কংগ্রেসের মিছিলে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মী শহীদ হন, যা পরবর্তীতে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মের পথ প্রশস্ত করে। এই দিনটি তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য শুধু শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন নয়, বরং বাংলার মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ের প্রতীক। ধর্মতলার এই সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, বাংলার মানুষ তাদের ইতিহাস ও সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলাকে বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ, যেমন আবাস যোজনা, মনরেগা এবং অন্যান্য প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে। এই অর্থ বাংলার গ্রামীণ ও শহুরে উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাকে আর্থিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা করছে, যাতে রাজ্যের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
অভিষেক বলেন, “বিজেপি বাংলার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তারা বাংলার সংস্কৃতি, ভাষা এবং অধিকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। আমরা তাদের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।”তৃণমূলের শক্তি ও জনগণের সমর্থনশহীদ দিবসের সমাবেশে ধর্মতলায় জনসমুদ্র প্রমাণ করে যে, তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার মানুষের মনে গভীরভাবে প্রোথিত।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সঞ্চারিত হয়েছে। তিনি বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার মানুষের জন্য কাজ করে। আমরা কখনোই কোনো প্রকল্প বন্ধ করিনি। আমাদের সরকার মানুষের উন্নয়নের জন্য নিবেদিত।” তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিশ্বাস করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল বাংলার মানুষের অধিকার ও সম্মান রক্ষায় সফল হয়েছে।
অভিষেকের বার্তা ছিল, “বাংলার মানুষ বিজেপির বাংলা-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। আমরা তাদের শূন্য করে ছাড়ব।”অভিষেকের এই বক্তব্যের পর বিজেপি নেতারা পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস শহীদ দিবসকে রাজনৈতিক প্রচারের জন্য ব্যবহার করছে।
তারা শহীদদের স্মৃতিকে অপমান করছে।” তবে তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, বিজেপি বাংলার মানুষের আবেগকে বোঝে না এবং তাদের বাংলা-বিরোধী নীতির কারণে জনগণের সমর্থন হারিয়েছে।
Microsoft-এর সাবধানবাণী! ভারতীয় সংস্থার সার্ভারে বিদেশি হ্যাকারদের আক্রমণ, পদক্ষেপের আর্জি
শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা বাংলার রাজনৈতিক ময়দানে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তাঁর হুঁশিয়ারি স্পষ্ট: বাংলা-বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস কঠোর অবস্থান নেবে। ধর্মতলার জনসমুদ্র প্রমাণ করে যে, বাংলার মানুষ তাদের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তৃণমূলের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। অভিষেকের বক্তব্য বাংলার রাজনীতিতে আগামী দিনে আরও তীব্র সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।