পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ময়দানে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek) রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন।
অভিষেক (Abhishek) দাবি করেছেন, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৭৭টি আসন জিতলেও, ২০২৬ সালের নির্বাচনে তাদের আসন সংখ্যা ৫০-এ নেমে যাবে। এই দাবি রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, এবং তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে চলতে থাকা দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করেছে।
অভিষেকের দাবি ও রাজনৈতিক আক্রমণ (Abhishek)
আজ সাতগাছিয়ায় একটি জনসভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek) বলেন, “২০২১ সালে শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন, বিজেপি ২০০-এর বেশি আসন জিতবে। কিন্তু ফলাফল হলো মাত্র ৭৭টি আসন। এবার ২০২৬-এ তাঁদের আসন আরও কমে ৫০-এ নেমে যাবে।” তিনি আরও বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপি শুধুমাত্র বিভাজনের রাজনীতি করছে।
বাংলার মানুষ তাঁদের এই নোংরা খেলা বুঝে গেছে।” অভিষেকের (Abhishek) এই মন্তব্য শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক কৌশল এবং বিজেপির সাংগঠনিক শক্তির উপর সরাসরি আক্রমণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অভিষেকের দাবির প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল উল্লেখযোগ্য। ২০২৪-এ তৃণমূল কংগ্রেস ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২৯টি জিতেছে, যেখানে বিজেপি পেয়েছে ১২টি আসন।
২০১৯ সালে বিজেপি ১৮টি আসন জিতেছিল, যা তাদের পতনের ইঙ্গিত দেয়। অভিষেক এই ফলাফলের উপর ভিত্তি করে দাবি করেছেন যে, বিজেপির ভোটের শতাংশও কমেছে—২০২১-এ ৩০.৯১% থেকে ২০২৪-এ ২৮.২৯%। তিনি বলেন, “২০২৬-এ এই পতন আরও তীব্র হবে।”
শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া
শুভেন্দু অধিকারী, যিনি ২০২১ সালে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করে রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপির প্রধান মুখ হয়ে উঠেছেন, অভিষেকের এই চ্যালেঞ্জকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ আমরা ভয় পাইনা ওদের কেও রিগিং করতে দেবোনা”। ২০২৬-এ বাংলার মানুষ তৃণমূলের দুর্নীতি ও অপশাসনের জবাব দেবে।
বিজেপি আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরবে।” শুভেন্দু দাবি করেছেন, তৃণমূলের শাসনকালে পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, এবং বিজেপি ২০২৬-এ সরকার গঠন করবে। তিনি আগেও একাধিকবার দাবি করেছেন, “২০২৬-এ রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন না হলে তৃণমূলকে হারানো যাবে না।”
শুভেন্দু অধিকারী (Abhishek) বিজেপির সাংগঠনিক কৌশলের মাধ্যমে হিন্দু ভোটের একীকরণের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি একাধিকবার বলেছেন, “হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, এবং তৃণমূলের পতন অনিবার্য।” তবে, তাঁর এই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কৌশল তৃণমূলের পক্ষ থেকে সমালোচিত হয়েছে। অভিষেক বলেন, “বিজেপি হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি করছে। বাংলার মানুষ এই বিভাজন মানবে না।”
২০২৬-এর নির্বাচনের গুরুত্ব
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে চলেছে। ২০২১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ২৯২টি আসনের মধ্যে ২১৪টি জিতে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসে। বিজেপি ৭৭টি আসন পেলেও, তাদের ভোটের শতাংশ তৃণমূলের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল।
তবে, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ফলাফল বিজেপির তুলনায় অনেক ভালো হওয়ায় অভিষেকের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। তিনি দাবি করেছেন, “বাংলার মানুষ তৃণমূলের উন্নয়নের রাজনীতির পক্ষে রায় দিয়েছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অভিষেকের (Abhishek) এই দাবি তৃণমূলের আগ্রাসী কৌশলের অংশ। তৃণমূল তাদের সাংগঠনিক শক্তি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তার উপর ভর করে ২০২৬-এ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অন্যদিকে, শুভেন্দু অধিকারী বিজেপির পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্পের প্রচারের মাধ্যমে ভোটারদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। তবে, তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অভিযোগ তৃণমূলের পক্ষে জনমত গঠনে সহায়ক হতে পারে।
বিজেপির অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জও উল্লেখযোগ্য। শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি রাজ্যে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হলেও, দিলীপ ঘোষের মতো নেতাদের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব দলের ঐক্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, সন্দেশখালি ও তমলুকের মতো ঘটনায় বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমস্যা প্রকাশ্যে এসেছে, যা তৃণমূল ব্যবহার করছে।
সেবাশ্রয় নিয়ে সাতগাছিয়ার সভা থেকে বড় ঘোষণা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
জনমত ও প্রতিক্রিয়া
সামাজিক মাধ্যমে অভিষেকের (Abhishek) এই দাবি নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “শুভেন্দু ২০২১-এ ৭৫-৮০% ভোটের দাবি করেছিলেন, কিন্তু ফলাফল ছিল উল্টো। ২০২৬-এও তাঁর দাবি ফাঁকা আওয়াজ।” তৃণমূল সমর্থকরা অভিষেকের এই চ্যালেঞ্জকে স্বাগত জানিয়েছেন, যখন বিজেপি সমর্থকরা শুভেন্দুর পক্ষে সোচ্চার।
২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লড়াই হতে চলেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেন্দু অধিকারীকে দেওয়া এই চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের আত্মবিশ্বাস এবং বিজেপির উপর চাপ সৃষ্টির কৌশলের ইঙ্গিত দেয়। শুভেন্দু অধিকারী এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বিজেপির পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করলেও, তাঁর ধর্মভিত্তিক কৌশল এবং দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আগামী দিনে এই রাজনৈতিক দ্বৈরথ কীভাবে এগোয়, তা বাংলার রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।