বাংলায় ফিরল দক্ষিণ দিনাজপুরের ৬০ জন নিগৃহীত পরিযায়ী শ্রমিক

দক্ষিণ দিনাজপুরের ৬০ জন বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক দিল্লি থেকে ফিরে এসেছেন, (Migrant Workers)যেখানে তাঁরা কেবল বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে নৃশংস নির্যাতন, অপমান এবং অর্থ…

Migrant Workers are back in bengal

দক্ষিণ দিনাজপুরের ৬০ জন বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক দিল্লি থেকে ফিরে এসেছেন, (Migrant Workers)যেখানে তাঁরা কেবল বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে নৃশংস নির্যাতন, অপমান এবং অর্থ আদায়ের শিকার হয়েছেন। অভিযোগ, দিল্লি পুলিশ তাঁদের মুক্তির জন্য ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মুক্তিপণ দাবি করেছে। এই শ্রমিকরা ভারতীয় নাগরিক, কিন্তু তাঁদের ভাষা এবং পরিচয়ের কারণে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

এই ঘটনাকে বাঙালি পরিচয়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা-চালিত ক্র্যাকডাউন হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে আরও উৎসাহিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের তত্ত্বাবধানে দিল্লি পুলিশ বাংলা ভাষাকে অপরাধীকরণ এবং বাঙালিদের উপর নির্যাতনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না বলে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।

   

ঘটনার বিবরণ

দক্ষিণ দিনাজপুরের এই ৬০ জন শ্রমিক দিল্লিতে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁরা বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে দিল্লি পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার হন। অভিযোগ অনুযায়ী, পুলিশ তাঁদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে মারধর করে, অপমান করে এবং মুক্তির জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে।

এই শ্রমিকরা বৈধ ভারতীয় নাগরিক হলেও তাঁদের ভাষা ও পরিচয়ের কারণে এই নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “দিল্লি পুলিশ বাঙালি শ্রমিকদের উপর নৃশংস নির্যাতন চালিয়েছে। তাঁদের কেবল বাংলা বলার জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এটি বিজেপি শাসনের ভাষাগত বৈষম্যের প্রকাশ।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন যে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের ভাষার ভিত্তিতে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “এই শ্রমিকরা বাংলাদেশি নন, তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা এবং ভারতের নাগরিক।

তাঁদের ভাষার কারণে তাঁদের উপর এই নির্যাতন অগ্রহণযোগ্য।” তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি পুলিশের একটি চিঠির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, যেখানে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি এটিকে বাঙালি পরিচয়ের প্রতি ইচ্ছাকৃত অপমান হিসেবে বর্ণনা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে ক্ষমা এবং দায়ী কর্মকর্তার বরখাস্তের দাবি জানান।

ভাষাগত বৈষম্যের অভিযোগ

এই ঘটনাকে অনেকে ‘ভাষাগত বৈষম্য’ বা ‘লিঙ্গুইস্টিক অ্যাপারথাইড’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বাংলা ভাষা, যা ভারতের সংবিধানের অষ্টম তফসিলে স্বীকৃত এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো মহান সাহিত্যিকদের ভাষা, তাকে বাংলাদেশি ভাষা হিসেবে উল্লেখ করা গভীর অপমানজনক বলে বিবেচিত হচ্ছে।

সিপিআই(এম) নেতা বৃন্দা কারাত এবং অনুরাগ সাক্সেনাও অমিত শাহকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছেন যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতকড়া পরানো, মারধর করা এবং ভয় দেখানো হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।

Advertisements

সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ

সামাজিক মাধ্যমে এক্স-এ এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “দিল্লি পুলিশ বাঙালি শ্রমিকদের উপর সংগঠিতভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছে। এমনকি শিশুদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি।” আরেকটি পোস্টে অভিযোগ করা হয়েছে, “দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানায় বাঙালি শ্রমিকদের বাংলা বলার জন্য নির্যাতন করা হচ্ছে।

এটি দিল্লির রাজধানী হিসেবে যোগ্যতার উপর প্রশ্ন তুলছে।” কলকাতার মেয়র এই ঘটনার নিন্দা করে বলেন, “বাঙালি শ্রমিকদের উপর এই নির্যাতন অগ্রহণযোগ্য।”রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবএই ঘটনা বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন যে বিজেপি ভাষার ভিত্তিতে রাজনীতি করছে এবং বাঙালি শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁদের হয়রানি করছে। এই ঘটনা বাঙালি পরিচয় এবং ভাষার মর্যাদার প্রতি আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলা ভাষা, যা ভারতের জাতীয় সঙ্গীত এবং জাতীয় গানের ভাষা, তার প্রতি এই ধরনের আচরণ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের উপর আঘাত বলে বিবেচিত হচ্ছে।

দক্ষিণ দিনাজপুরের ৬০ জন বাঙালি শ্রমিকের উপর দিল্লি পুলিশের নির্যাতন ভারতের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি অসম্মানের প্রকাশ। এই ঘটনা কেবল শ্রমিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং এটি বাঙালি পরিচয়ের উপর হামলা।

বেতন কমিশনে সরকারি শিক্ষকদের জন্য বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতি এবং ডিএ-তে কী আশা করা যায়

অমিত শাহের নেতৃত্বে দিল্লি পুলিশের এই আচরণের তীব্র নিন্দা করা হচ্ছে এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি উঠেছে। এই ঘটনা ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ভাষাগত ন্যায়বিচার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।