দুষ্কৃতীদের নিশানায় নদিয়ার ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী মন্দির

দুষ্কৃতীদের নিশানায় এবার নদিয়ার (Nadia) এক ঐতিহ্যবাহী পূজাস্থান। নাকাশীপাড়া থানার অন্তর্গত বড়গাছি গ্রামের গৌড় আশ্রমে প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন অন্নপূর্ণা ও ঈশ্বরী পাটনি স্মৃতি বিজড়িত…

400-Year-Old Nadia Temple Theft: Annapurna and Ishwari Idols Robbed in Bargachi Burglary

দুষ্কৃতীদের নিশানায় এবার নদিয়ার (Nadia) এক ঐতিহ্যবাহী পূজাস্থান। নাকাশীপাড়া থানার অন্তর্গত বড়গাছি গ্রামের গৌড় আশ্রমে প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন অন্নপূর্ণা ও ঈশ্বরী পাটনি স্মৃতি বিজড়িত মন্দিরে চুরির ঘটনায় ছড়িয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও ক্ষোভ। বুধবার গভীর রাতে এই মন্দিরের দরজার তালা ভেঙে বিগ্রহের গায়ে থাকা প্রায় চার ভরি সোনার গয়না এবং দীর্ঘদিন খোলা না হওয়া প্রণামী বাক্স থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা চুরি করে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গৌড় আশ্রম এলাকায় অবস্থিত এই মন্দিরটি শুধু একটি পূজাস্থান নয়, এলাকাবাসীর ধর্মীয় আবেগ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক। বহু বছর ধরে এই মন্দির ঘিরেই চলে আসছে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড, উৎসব-অনুষ্ঠান। মন্দিরে নিয়মিত ভক্ত সমাগম না থাকলেও, আশ্রমটি এলাকাবাসীর শ্রদ্ধার কেন্দ্রবিন্দু।

   

চুরির ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে বৃহস্পতিবার সকালে, স্থানীয় বাসিন্দারা প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে মন্দিরের দরজা খোলা দেখে সন্দেহ করেন। এরপরই ছুটে আসেন আরও অনেকে। মন্দিরের ভিতরে ঢুকে দেখা যায়, বিগ্রহের গা থেকে সোনার গয়না উধাও এবং প্রণামী বাক্স ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় নাকাশীপাড়া থানায়।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না। এই আশ্রম আমাদের গর্ব, এই মন্দিরের ইতিহাস শতাব্দী প্রাচীন। ভগবানের গা থেকে গয়না খুলে নিয়ে যাওয়া, এটা শুধু চুরি নয়, ধর্মীয় ভাবাবেগেও আঘাত।’’

স্থানীয় সূত্রে দাবি, মন্দিরের প্রণামী বাক্সটি অন্তত দু’বছর ধরে খোলা হয়নি। ফলে বাক্সে জমে ছিল বেশ কিছু টাকা। প্রাথমিকভাবে অনুমান, প্রায় ৭০ হাজার টাকা ছিল ওই বাক্সে। তার সঙ্গে বিগ্রহের গায়ে থাকা চার ভরি সোনার গয়না — সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ লক্ষ টাকা।

সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়, এই চুরির কয়েক দিন আগেই কাছাকাছি আরেকটি গ্রামে এক মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে ধরতে পারেনি। আর এবার নতুন করে ঐতিহ্যবাহী গৌড় আশ্রমে চুরি — এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার মন্দির লক্ষ্য করে এমন চুরির ঘটনার পরেও পুলিশ পর্যাপ্ত নজরদারি করছে না। “একটা মন্দিরে চুরি হলে পরে তো পুলিশকে আরও সতর্ক হওয়ার কথা, অথচ আমরা দেখছি তারা এখনও গা-ছাড়া মনোভাবেই চলছে,” অভিযোগ তুলেছেন আশ্রমের পুরোহিত।

Advertisements

মন্দিরটি নিয়ে নানা লোককথা ও ধর্মীয় বিশ্বাস প্রচলিত। জনশ্রুতি অনুসারে, এই আশ্রমের সংলগ্ন এলাকাতেই দেবী অন্নপূর্ণা কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন। প্রভু নিত্যানন্দের গাত্র হরিদ্রা এই স্থানেই হয়েছিল বলে বহু বছর ধরে এই স্থানটিকে তীর্থস্থান হিসেবে মানা হয়। সেই পবিত্র স্থানে এমন চুরি শুধু আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নই নয়, মানুষের আবেগে বড়সড় আঘাত।

চুরির ঘটনার তদন্তে নেমেছে নাকাশীপাড়া থানার পুলিশ। মন্দির চত্বরে এবং আশেপাশে কোনও সিসিটিভি না থাকায় তদন্তে কিছুটা সমস্যা হলেও, স্থানীয় সূত্রে খোঁজখবর শুরু করেছে পুলিশ। পাশাপাশি এলাকার সন্দেহভাজনদের নজরবন্দি করা হচ্ছে বলেও খবর।

এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, “ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। আশ্রম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, রাত দুটো থেকে তিনটার মধ্যে এই চুরির ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে এসেছে, আমরা খুব শিগগিরই দোষীদের চিহ্নিত করতে পারব।”

এই চুরির পর এলাকার অন্যান্য মন্দিরেও নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি উঠেছে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, “মন্দিরে সিসিটিভি বসানো, রাত্রিকালীন প্রহরা চালু করা জরুরি। পুলিশের কাছেও আমাদের আবেদন, দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করা হোক এবং চুরি যাওয়া সম্পত্তি উদ্ধার করে এলাকাবাসীর বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা হোক।”

এখন দেখার, পুলিশ কত দ্রুত এই ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে চুরির রহস্য উদঘাটন করে। তবে আপাতত আতঙ্ক, ক্ষোভ ও হতাশায় ভুগছে বড়গাছির মানুষ।