পুলিশ হেফাজতে বিষপান, তদন্তের স্বচ্ছতার স্বার্থে ৪ পুলিশ কর্মী সাসপেন্ড

মিলন পণ্ডা, মহিষাদল: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদল থানায় পুলিশ হেফাজতে (Police Custody) এক অভিযুক্ত ব্যক্তির বিষপানের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই চারজন পুলিশ কর্মীকে…

পুলিশ হেফাজতে বিষপান, তদন্তের স্বচ্ছতার স্বার্থে ৪ পুলিশ কর্মী সাসপেন্ড

মিলন পণ্ডা, মহিষাদল: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদল থানায় পুলিশ হেফাজতে (Police Custody) এক অভিযুক্ত ব্যক্তির বিষপানের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই চারজন পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। অভিযুক্ত ব্যক্তি শেখ আমজাদ শা’র হেফাজতে থাকাকালীন বিষক্রিয়া ও পরে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনার তদন্তে স্বচ্ছতা রাখতেই এই কঠোর পদক্ষেপ বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।

সাসপেন্ড হওয়া পুলিশ কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন মামলার তদন্তকারী অফিসার সাব-ইন্সপেক্টর অরুণাংশু বর, ডিউটি অফিসার সাব-ইন্সপেক্টর দেশবন্ধু বাগ, সেন্ট্রি পদে নিযুক্ত হোমগার্ড শ্রীকান্ত জানা এবং কনস্টেবল মোহিত কুমার সিং। জেলা পুলিশের এক শীর্ষসূত্রে জানানো হয়েছে, ঘটনার গভীরে পৌঁছতে এবং নিরপেক্ষ তদন্তে কোনো রকম প্রভাব না পড়তে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

   

জেলা পুলিশের ডিএসপি (ডিইবি) শান্তব্রত চন্দ বলেন, “একজন বিচারাধীন অভিযুক্তের বিষপানের মতো গুরুতর ঘটনার তদন্তে আমরা সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখতে চাই। তাই ওই চারজনকে আপাতত সাসপেন্ড করা হয়েছে।”

ঘটনার সূত্রপাত বুধবার রাতে, যখন মহিষাদলের মছলন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ আমজাদ শা-কে তাঁর স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুর অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ অনুযায়ী, আমজাদের বিরুদ্ধে বধূহত্যার মামলা দায়ের হয়। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বাসুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ করে থানায় ফিরিয়ে আনার কিছুক্ষণ পরই আমজাদ আচমকা বমি করতে থাকেন।

তৎক্ষণাৎ আবার তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে দ্রুত স্থানান্তরিত করা হয় তমলুক সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে যে, থানার ভেতরে বা হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে আমজাদ অ্যাসিড জাতীয় কিছু অথবা কোনও বিষাক্ত তরল পদার্থ গ্রহণ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এটি হতে পারে শৌচাগার পরিষ্কারের বিষাক্ত তরল।

Advertisements

তবে, প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ হেফাজতের মতো সুরক্ষিত জায়গায় কীভাবে একজন অভিযুক্ত এমন মারণ দ্রব্য হাতে পেলেন? থানার ভেতরে এমন পদার্থ রাখা ছিল কিনা, না কি কোথাও থেকে সেটা সংগ্রহ করা হয়েছে – তা নিয়ে তৈরি হয়েছে গভীর রহস্য।

মহিষাদল থানার পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই একটি বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে, থানায় কোনো সুরক্ষা ত্রুটি ঘটেছিল কিনা। থানায় কোন জায়গা থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিষাক্ত দ্রব্য সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে থানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও মানবাধিকার কর্মীরা। অনেকের মতে, থানার মতো সুরক্ষিত জায়গায় এই ধরনের ঘটনা পুলিশি গাফিলতিরই প্রমাণ।

ঘটনার তদন্ত এখনো চলমান। পুলিশ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে আরও পুলিশ কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে এবং যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।