মিলন পণ্ডা, কাঁথি: আবারও এক হৃদয়বিদারক পথ দুর্ঘটনা (Road Accident) কাঁথিতে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে (আইসিডিএস) থেকে খাবার নিয়ে ফেরার পথে মায়ের চোখের সামনে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাল মাত্র তিন বছরের এক নিষ্পাপ শিশুকন্যা। মৃত শিশুটির নাম রাধিকা দাস (৩)। তার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি থানার অন্তর্গত পূর্ব শ্রীরামপুর গ্রামে।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা নাগাদ, কাঁথি-মাজনা রোডের শ্রীরামপুর এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের মতোই ওইদিনও রাধিকার মা তাকে শ্রীরামপুর গ্রাম সংলগ্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নিয়ে যান। ছুটি হওয়ার পর রাধিকা অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে কেন্দ্রে থেকে বেরিয়ে আসে এবং রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছিল। তার মা পিছনে খিচুড়ি ও অন্যান্য খাবারের হাঁড়ি নিয়ে ফিরছিলেন।
ঠিক সেই সময় দ্রুতগতিতে একটি জল সরবরাহ সংস্থার গাড়ি কাঁথি-মাজনা রোড ধরে ছুটে আসে। অগোচরে সেই গাড়ির চাকার নিচে পড়ে যায় ছোট্ট রাধিকা। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, দুর্ঘটনার পর গাড়িচালক দ্রুত ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে কাঁথি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘাতক গাড়িটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। চালকের খোঁজে শুরু হয়েছে তল্লাশি।
দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের সদস্যরা শোকে ভেঙে পড়েন। অনেকেই অভিযোগ করেন, ওই রাস্তায় নিয়মিতভাবে গাড়ি দ্রুতগতিতে চলাচল করে, অথচ নেই কোনও সিগনাল বা গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা।
এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, কার গাফিলতিতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘাতক চালকের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।”
এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ঘটনাস্থলে এসে শোকস্তব্ধ পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন এবং দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি তোলেন।
এই দুর্ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিল শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যাতায়াতে ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে যে কোনোদিন বড় বিপদ ঘটতে পারে, তারই জ্বলন্ত প্রমাণ রাধিকার মর্মান্তিক মৃত্যু।
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের আশেপাশে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ, সাইনবোর্ড, সিসিটিভি এবং পুলিশি টহল বাড়ানো হোক।
রাধিকার অকাল মৃত্যু শুধু তার পরিবারকেই নয়, গোটা শ্রীরামপুর গ্রামবাসীকেই স্তব্ধ করে দিয়েছে।