মিলন পণ্ডা, নন্দীগ্রাম: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলায় বেআইনি ভাবে চলতে থাকা ২২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার (Diagnostic Centers) বন্ধ করে দিল জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে এবং বেআইনি বেসরকারি সংস্থাগুলির উপর লাগাম টানতেই এই বড় পদক্ষেপ বলে দাবি জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের।
নন্দীগ্রাম ও তার সংলগ্ন এলাকায় দিনের পর দিন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছিল বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নার্সিংহোম। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই সংস্থাগুলোর কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা বৈধ লাইসেন্স ছিল না। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই সম্প্রতি গঠিত একটি বিশেষ পর্যবেক্ষক টিম জেলার বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালিয়ে একাধিক অনিয়মের হদিস পায়।
জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা সিএমওএইচ অসিত কুমার দেওয়ান জানান, “আমাদের স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে নিয়মিত পরিদর্শনের সময় দেখা যায় যে, অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। তাই আমরা ২২টি সংস্থা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি। পুলিশের সহযোগিতায় আমরা এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পেরেছি।”
তিনি আরও জানান, “যাঁরা এই মুহূর্তে বন্ধ করা হয়েছে, তাঁরা চাইলে পুনরায় লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। আমরা আইনি পদ্ধতি মেনে তাঁদের সহযোগিতা করব। তবে বৈধ লাইসেন্স ছাড়া কেউই ব্যবসা চালাতে পারবেন না।”
এই ঘটনার পর রীতিমতো আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে জেলার অন্যান্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নার্সিংহোম মালিকদের মধ্যে। অনেকে নিজেরাই তড়িঘড়ি কাগজপত্র খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
বর্তমানে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার অধীনে মোট ১৩৬টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ৪৮টি নার্সিংহোম নথিভুক্ত রয়েছে। প্রশাসনের দাবি, এদের মধ্যে অনেকেই আগে থেকেই লাইসেন্সবিহীন ভাবে কাজ করছিল। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সেই সমস্ত সংস্থার তালিকা তৈরি করে ইতিমধ্যেই অভিযান শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার অধীনে রয়েছে ১১টি ব্লক এবং একটি পুরসভা। যদিও এখনো পর্যন্ত সব এলাকায় নজরদারি সম্পূর্ণ ভাবে চালানো সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা মনে করছেন, যদি পূর্ণাঙ্গ নজরদারি চালানো যায়, তাহলে আরও অনেক বেআইনি সংস্থার হদিস মিলতে পারে।
সাধারণ মানুষদের প্রতিও সচেতন বার্তা দিয়েছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, চিকিৎসা করানোর আগে সংশ্লিষ্ট সেন্টার বৈধ কিনা তা যাচাই করে নেওয়া উচিত।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে এই ধরনের বেআইনি প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠতে না পারে, সেইদিকে কড়া নজর রাখা হবে। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকেও প্রতিনিয়ত নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে।
এই ঘটনার জেরে স্বাস্থ্য পরিষেবার মান বজায় রাখার প্রয়াসে নতুন করে আস্থা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের এই ধরনের সক্রিয় ভূমিকায় আগামী দিনে স্বাস্থ্য খাতে স্বচ্ছতা ফিরবে বলেই মনে করছেন জেলার বিশিষ্ট নাগরিকরা।