পাখির চোখ ২০২৬-এর নির্বাচন, একাধিক প্রকল্পে বাজিমাতের ছক তৃণমূলের

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে একটি বড় বাস্তবতা উঠে আসে — গ্রামবাংলা থেকে বিপুল ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস, কিন্তু শহরাঞ্চলের ভোটের হার তুলনামূলকভাবে কম…

Mamata Banerjee hindi s[eech controversy

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে একটি বড় বাস্তবতা উঠে আসে — গ্রামবাংলা থেকে বিপুল ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস, কিন্তু শহরাঞ্চলের ভোটের হার তুলনামূলকভাবে কম ছিল। যদিও এর বিশেষ প্রভাব উপনির্বাচনে দেখা যায়নি, তবুও আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্য শাসক দল নিজেদের কৌশল আরও মজবুত করছে।

২০২৬ সালের (2026 Election) বিধানসভা নির্বাচনকে টার্গেট করে নতুন প্রকল্প আনছে রাজ্য সরকার — “আমার পাড়া, আমার সমাধান”। এই প্রকল্পের মাধ্যমে একেবারে পাড়া পর্যায়ে গিয়েই মানুষের সমস্যার সমাধান করতে চায় সরকার। উদ্দেশ্য একটাই — উন্নয়ন ও নাগরিক পরিষেবার নিরিখে শহর, গ্রাম ও মফঃস্বল সব স্তরেই রাজনৈতিক ভিতকে আরও শক্ত করা।

   

কী এই ‘আমার পাড়া, আমার সমাধান’ প্রকল্প?
এই নতুন প্রকল্পের আওতায়, রাজ্যের প্রতিটি বুথকে দেওয়া হবে ১০ লক্ষ টাকা। তিনটি বুথ নিয়ে তৈরি হবে একটি পাড়া এবং সেখানেই হবে একটি ক্যাম্প। এই ক্যাম্পেই থাকবে ‘দুয়ারে সরকার’ ডেস্ক। মানুষ সরাসরি তাঁদের সমস্যার কথা জানাতে পারবেন, এবং স্থানীয় স্তরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এই বরাদ্দ অর্থ কীভাবে খরচ হবে।

রাজ্যের প্রায় ৮০ হাজার বুথে এই প্রকল্প কার্যকর হবে এবং এই সমস্যা নিরসনের সময়সীমা রাখা হয়েছে ৬০ দিন। পুজোর ছুটির কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত সময়ও রাখা হয়েছে। এই পুরো প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে থাকবেন রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ।

কেন এই নতুন প্রকল্প?
রাজ্যে ইতিমধ্যেই চলছে ‘দুয়ারে সরকার’, ‘স্বাস্থ্য সাথী’, ‘কন্যাশ্রী’, ‘যুবশ্রী’-সহ মোট ৯৪টি প্রকল্প। তাহলে কেন নতুন করে পাড়াভিত্তিক এই প্রকল্প?

এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো — ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর নিরসন করা, যা বৃহৎ গ্রাম বা শহরাঞ্চলের ভিতরে থেকেও উপেক্ষিত থেকে যায়।

গ্রামের অধিকাংশ রাস্তা উন্নত হলেও কোনো একটি পাড়ায় রাস্তাঘাট খারাপ — এই প্রকল্প সেই সমস্যাকে অগ্রাধিকার দেবে।

Advertisements

কোনো অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ছাদ নেই — সেদিকে নজর দেওয়া হবে।

গোটা গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবা থাকলেও একটি পাড়ায় এখনও আলো জ্বলছে না — সেটিও বিবেচনায় আসবে।

এই ছোট ছোট সমস্যাগুলোর সমাধানের মাধ্যমেই জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বাড়িয়ে নিতে চায় রাজ্য সরকার।

এই সময়েই ২০২৬ সালের প্রস্তুতিতে মাঠে নেমে পড়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। বুথ স্তরে সংগঠন মজবুত করার জন্য নিচুতলার নেতাদের মাঠে নামানো হয়েছে। শাসক দলের বিরুদ্ধে একাধিক ইস্যু তুলে ধরার পাশাপাশি, বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ের ওপরও প্রচার চালানো শুরু করেছে তারা।

রাজ্যের রাজনীতিতে ২০২৬ সাল হয়ে উঠছে একটা টার্নিং পয়েন্ট। একদিকে যখন তৃণমূল কংগ্রেস পাড়ায় পাড়ায় উন্নয়ন নিয়ে ভোটারের মন জয় করার পরিকল্পনা নিচ্ছে, তখন অন্যদিকে বিজেপি নিচু স্তরে সংগঠন মজবুত করে পাল্টা চাপ তৈরি করতে চাইছে। ‘আমার পাড়া, আমার সমাধান’ প্রকল্প এই ভোট যুদ্ধের নির্ণায়ক হতে পারে — এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।