পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের জেলগুলিতে (West Bengal Prisons) এক অদ্ভুত এবং আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে চলেছে। ২০২৪ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত মোট ১৯৬ জন শিশু জন্মেছে জেলের মধ্যে৷ যেখানে এসব শিশুর মা-রা সকলেই দণ্ডিত মহিলা বন্দি। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল, এই মহিলারা তাদের দণ্ডের সময় গর্ভবতী ছিলেন না এবং এসব শিশুর বাবার পরিচয় আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
এই পরিস্থিতি নিয়ে এখন তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এই মহিলারা কার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন এবং তারা কীভাবে গর্ভবতী হলেন? পশ্চিমবঙ্গের জেলগুলি নিয়ে রাজনৈতিক সমালোচনা এখন তুঙ্গে। একটি পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন (পিআইএল) কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করা হয়েছে, যেখানে এই অস্বাভাবিক ঘটনায় তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
১৯৬ শিশু, কিন্তু বাবা কে?
পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের জেলগুলিতে বর্তমানে ১৯৬টি শিশু রয়েছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই সদ্যজাত। এই মহিলাদের মধ্যে কিছু অবিচার বা দণ্ডিত বন্দি, আবার কিছু এখনও বিচারাধীন। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই মহিলাদের মধ্যে কোনও পুরুষের সংস্পর্শে আসার সুযোগ ছিল না, কারণ মহিলা বন্দিরা এবং কারারক্ষীরা সকলেই মহিলা। তাহলে, এই ১৯৬টি শিশুর বাবা কে?
কেন এ ঘটনা ঘটছে?
এ ধরনের ঘটনা প্রথমে নজরে আসতে শুরু করে যখন কিছু বন্দি মহিলা গর্ভবতী অবস্থায় কোর্টে হাজির হয়ে জানান যে তারা জেলের মধ্যে গর্ভবতী হয়েছেন। এমনকি এই বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে একাধিক বার শুনানি হয়েছে। এক অমিকাস কিউরির বক্তব্য ছিল, “এটা সত্যিই বিস্ময়কর যে, যখন মহিলারা বন্দিত্বে রয়েছেন, তখন তারা গর্ভবতী হচ্ছেন। এটি কি শুধুমাত্র একাধিক ঘটনা, নাকি এর পিছনে অন্য কোনো গভীর কারণ আছে?”
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিরোধীরা তীব্র আক্রমণ শানাচ্ছেন। বিজেপির বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল বলেছেন, “এখন পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণ এক সাংস্কৃতিক রূপ নিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যাকে আমরা দিদি বলে জানি, তাঁকে এ বিষয়ে জবাব দিতে হবে। জেলে মহিলারা কীভাবে গর্ভবতী হচ্ছেন? এর পেছনে কে দায়ী?”
তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের এইসব অপরাধের শিকার হতে হচ্ছে, যা খুব লজ্জাজনক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, কারণ তার রাজ্যে মহিলারা নিরাপদ নয়।”
শাসক দল কি বলছে?
এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী ডঃ শশী পাঁজা এই বিষয়ে জানান, “আমি এই তথ্য জানি না, তবে কারাগারের জন্য আলাদা মন্ত্রী রয়েছেন। আমি বিষয়টি যাচাই করব।” অপরদিকে, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেছেন, “এই বিষয়ে বিচারাধীন রয়েছে। জেল আইজি রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছেন এবং তদন্ত চলছে।”
তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হল, এত বড় ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। কারা গঠনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল, তা নিয়ে জেল প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠছে।
এ বিষয়টির উপর হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ
হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়, “এটা খুবই অদ্ভুত যে, জেল বন্দি মহিলারা জেলে থাকতে গর্ভবতী হচ্ছেন এবং তাদের মধ্যে শিশু জন্মাচ্ছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলে ১৯৬টি শিশু অবস্থান করছে। তবে, তাদের বাবা কে, তা নির্ধারণ করা এখনও বাকি।” এছাড়া, এই বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টও মনোযোগ দিয়েছে এবং তারা বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে এর উপর তদন্ত শুরু করার কথা বলেছে।
এখন কী হতে পারে?
রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক চলছে, তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখনও অজানা রয়েছে—এই ঘটনাগুলির পিছনে কারা দায়ী? কীভাবে বন্দি মহিলারা গর্ভবতী হচ্ছেন? সরকারি তরফে তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হলেও, এখনও পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এছাড়া, রাজ্য সরকারের পক্ষে এই ঘটনার কোন দিকনির্দেশনা বা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কোনো পরিষ্কার বক্তব্য দেওয়া হয়নি। আসন্ন হাইকোর্টের শুনানির পর হয়তো এই ঘটনার একটি পরিষ্কার দিক জানা যাবে।
সমাজের কাছে এক কঠিন প্রশ্ন
পশ্চিমবঙ্গের এই ঘটনায় যেমন রাজ্য সরকারের উপর আক্রমণ শুরু হয়েছে, তেমনি সমাজে প্রশ্ন উঠছে—এ ধরনের ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারে, যেখানে জেলে কোনো পুরুষ বন্দী নেই? কোথা থেকে আসছে এই সমস্যা, এবং এর পরিণাম কী হতে পারে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
সম্ভবত, এই ঘটনার মাধ্যমে অনেক অদেখা এবং অব্যাখ্যাত দিক সামনে আসবে, যা জনসাধারণের পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।