স্কুলে ছাত্রীদের মারধরের অভিযোগ, অসুস্থ ১৬, অভিযুক্ত শিক্ষক আটক

বীরভূম: আবারও শিক্ষক নির্যাতনের অভিযোগে উত্তাল শিক্ষাঙ্গন। বৃহস্পতিবার রামপুরহাটের একটি বেসরকারি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘটে গেল চাঞ্চল্যকর ঘটনা। বিদ্যালয়ের জীববিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মারধর করেছেন বলে অভিযোগ…

Crime Branch arrest gang

বীরভূম: আবারও শিক্ষক নির্যাতনের অভিযোগে উত্তাল শিক্ষাঙ্গন। বৃহস্পতিবার রামপুরহাটের একটি বেসরকারি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘটে গেল চাঞ্চল্যকর ঘটনা। বিদ্যালয়ের জীববিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে একাদশ শ্রেণির ১৬ জন ছাত্রী (Students)। আতঙ্কে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন অনেকে। দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ঘটনার পরই আটক করা হয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষককে।

ঘটনাস্থল সন্ধিপুর এলাকার একটি নামী বেসরকারি স্কুল। বৃহস্পতিবার সকালে চলছিল জীববিদ্যার ক্লাস। অভিযোগ, এক শিক্ষার্থী কোনও প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দিতে পারায় শিক্ষক রেগে গিয়ে একাধিক ছাত্রীকে মারধর করেন। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পুরো ক্লাস। আতঙ্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে একে একে জ্ঞান হারাতে শুরু করে ১৬ জন ছাত্রী।

   

এই দৃশ্য দেখে অন্যান্য শিক্ষক ও স্কুল কর্মীরা দ্রুত ছাত্রীদের উদ্ধার করে রামপুরহাট মেডিক্যালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে পৌঁছয় রামপুরহাট থানার পুলিশ। ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের বয়ান অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও মারধর ও খারাপ ব্যবহারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এমনকি কিছুদিন আগেই একাদশ শ্রেণির বহু ছাত্রী মিলে গণস্বাক্ষর করে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান যে, তাঁরা আর ওই শিক্ষকের ক্লাস করতে চান না। কিন্তু অভিযোগ উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার ফের তাঁদের সেই শিক্ষকের ক্লাসে বসানো হয় বলে ছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।

এক ছাত্রী জানায়, “স্যার যেভাবে চোখ রাঙিয়ে কথা বলেন, হঠাৎ হঠাৎ বেঞ্চে হাত মারেন, আমরা ভয় পেয়ে যাই। কেউ প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে সবার সামনে অপমান করেন। কখনও কখনও অশোভন ইঙ্গিতও করেন, যা আমাদের খুব অস্বস্তিকর লাগে।”

Advertisements

উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, একাদশ শ্রেণির জীববিদ্যার পাঠ্যক্রমে মানব শরীরের সংবেদনশীল বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই বিষয় পড়াতে গিয়ে শিক্ষক কতটা শালীন এবং সংবেদনশীল আচরণ করছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাবিদদের মতে, ছাত্রীদের সঙ্গে সংবেদনশীল বিষয় পড়ানোর সময় শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে আস্থা ও নিরাপত্তার সম্পর্ক থাকা দরকার। সেই জায়গাটাই হয়তো ব্যাহত হচ্ছিল।

ঘটনার গুরুত্ব বুঝে স্কুলের কলকাতা সদর দফতর থেকে কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই রামপুরহাট রওনা দিয়েছেন। অভিভাবকদের ক্ষোভ চরমে। স্থানীয় বাসিন্দারাও স্কুল চত্বরে জড়ো হন এবং কঠোর শাস্তির দাবি তোলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিশু অধিকার লঙ্ঘন, শারীরিক হেনস্থা ও মানসিক নির্যাতনের ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কেন আগের অভিযোগের পরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এই ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠছে, স্কুলে পড়ুয়াদের সুরক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি শুধুই শিক্ষাদানের স্থান, না কি সেখানে মানবিক সম্পর্ক এবং মানসিক নিরাপত্তার প্রশ্নটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ — সেই আলোচনা ফের সামনে আনল রামপুরহাটের এই ঘটনা।