পার্কস্ট্রিট চত্বরে নবান্ন অভিযানের সময় পুলিশের লাঠিচার্জে (Lathicharge)প্রায় ১০০ জন বিজেপি কর্মী আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় বিজেপি নেতা অর্জুন সিংয়ের মাথা ফেটে গুরুতর আহত হয়েছেন সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দা। অভয়া কাণ্ডে ন্যায়বিচারের দাবিতে বিজেপি আয়োজিত এই অভিযান ডোরিনা ক্রসিং থেকে শুরু হয়েছিল।
কিন্তু পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ব্যারিকেডের কারণে মিছিলটি নবান্নের দিকে অগ্রসর হতে পারেনি। পুলিশের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষে পরিস্থিতি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়, এবং এই ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
অভয়া কাণ্ড ও নবান্ন অভিযান
অভয়া কাণ্ডে ন্যায়বিচারের দাবিতে বিজেপি এই নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল। অভয়া কাণ্ডে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার এবং কঠোর শাস্তির দাবিতে দলের কর্মী ও সমর্থকরা পার্কস্ট্রিট ও ডোরিনা ক্রসিংয়ে জড়ো হন। মিছিলে ‘ন্যায় চাই’ এবং ‘চোর চোর’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা।
বিজেপি নেতারা জানান, এই অভিযান ছিল শান্তিপূর্ণ, এবং তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো। কিন্তু পুলিশের ব্যারিকেড এবং গার্ডরেল অতিক্রম করার চেষ্টার সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পুলিশের লাঠিচার্জ ও সংঘর্ষ
পার্কস্ট্রিটে মিছিল যখন ডোরিনা ক্রসিংয়ের কাছে পৌঁছায়, তখন পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের পথ আটকে দেয়। বিজেপি কর্মীরা গার্ডরেল টপকানোর চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।
এই ঘটনায় প্রায় ১০০ জন বিজেপি কর্মী আহত হন, এবং বিজেপি নেতা অর্জুন সিংয়ের মাথা ফেটে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মিছিলকারীরা পাথর ছুঁড়েছিল এবং ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেছিল, যার ফলে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হয়।
বিজেপির ক্ষোভ ও অভিযোগ
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, “পুলিশ নির্বিচারে লাঠিচার্জ করেছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমন করার জন্য রাজ্য সরকার পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।” অর্জুন সিংয়ের আঘাত নিয়ে তিনি বলেন, “একজন প্রাক্তন সাংসদের উপর এই ধরনের হামলা গণতন্ত্রের উপর আঘাত।”
বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার দাবি করেন, “অভয়া কাণ্ডে ন্যায়বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তায় থাকব। পুলিশের এই বর্বরতা আমাদের আন্দোলনকে দমাতে পারবে না।” তারা আটক কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
জনজীবনে প্রভাব
নবান্ন অভিযানের আগে থেকেই কলকাতা ও হাওড়ায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। পার্কস্ট্রিট, ডোরিনা ক্রসিং এবং হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাফ মোতায়েন করা হয়। ব্যারিকেড, জলকামান এবং ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হয়।
এই ঘটনার ফলে পার্কস্ট্রিট ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়, যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী রাকেশ শর্মা বলেন, “এই সংঘর্ষের কারণে আমাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাস্তা বন্ধ থাকায় গ্রাহকরা আসতে পারছেন না।”
রেজিস্টার্ড পোস্ট নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করল ডাক বিভাগ, ইন্ডিয়া পোস্টের বড় ব্যাখ্যা
রাজনৈতিক প্রভাব
এই ঘটনায় পুলিশ একাধিক বিজেপি কর্মীকে আটক করেছে, এবং তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও হিংসাত্মক কার্যকলাপের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিজেপি ঘোষণা করেছে যে তারা এই ঘটনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে এবং অর্জুন সিংয়ের উপর হামলার প্রতিবাদে আরও বড় আন্দোলনের ডাক দেবে।
পার্কস্ট্রিটে পুলিশের লাঠিচার্জ এবং অর্জুন সিংয়ের আহত হওয়ার ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অভয়া কাণ্ডে ন্যায়বিচারের দাবি নিয়ে শুরু হওয়া এই অভিযান এখন পুলিশ ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষের কারণে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, এবং এই ঘটনা ভবিষ্যতে রাজ্যে আরও বড় আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করতে পারে।